হামজা-ফাহামিদুলদের নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন, কিন্তু…

শিলংয়ে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আগে উপস্থাপক সুনীল ছেত্রীর নাম বলতেই হাজার ১৫ দর্শক সমস্বরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। নিজ দেশে খেলা আর ছেত্রী বড় আইকন। তাই এমনটি হতেই পারে। কিন্তু হামজা চৌধুরীর নাম বলতেই এর চেয়ে বেশি উচ্ছ্বাস যখন ভেসে এলো, একটু অবাক হতে হলো। সেখানে তো বাংলাদেশের কোনও সমর্থক নেই। তাহলে? ইংলিশ লিগে খেলা ২৭ বছর বয়সী মিডফিল্ডারের পরিচিতি ততক্ষণে জেনে গেছেন সবাই। হামজা যে ওই ম্যাচে সবচেয়ে বড় তারকা, তাই হয়তো দর্শকরা তাকেও সাদরে সম্ভাষণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এই জায়গায় দারুণ সফল। হামজার পাশাপাশি এখন ফাহামিদুলসহ অন্যদের নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। দেশের বাইরে বড় হওয়া ফুটবলারদের নিয়ে লাল-সবুজ দলের খোলনলচে পাল্টে দেওয়া সম্ভব। এমন তত্ত্ব এগিয়ে চলছে। কিন্তু সৌদি আরবে ‘ফাহামিদুল কাণ্ডে’ আবার ভয়ও আছে।

এমনিতে কেউ কারও জায়গা ছাড়তে নারাজ। এটাই পৃথিবীর নিয়ম। ডারউইনের সেই তত্ত্ব ‘সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’ এর মতো, অনেকটা লড়াই করে টিকে থাকা। হামজা ইংলিশ লিগের ফুটবলার বলে কিছুটা সহজেই উতরে গেছেন। কিন্তু ফাহামিদুলরা তো হামজার মতো নয়। তাদেরকে শুধু পরিবেশ নয়, অন্যরকম ‘যুদ্ধ’ করতে হচ্ছে।

এই যেমন সৌদি আরবের তায়েফে হাভিয়ের কাবরেরার কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ইতালির সিরি ডি লিগে খেলা ফাহামিদুল পারফরম্যান্স দিয়ে সবার দৃষ্টি কেড়েছিলেন। তার গতি, ড্রিবলিং, পাসিং, শুটিং দেখে সবাই অনেকটা মুগ্ধ হয়েছিলেন। এমনকি যেখানে স্থানীয় ফুটবলাদের মান সবসময় বলা হয় ১৮ থেকে ২০। সেখানে ফাহামিদুল এক লাফে গ্রাফ ৩০ এ উন্নীত করেছিলেন! কিন্তু এখানে যা হয়। কিছু স্থানীয় ফুটবলারের সহজেই তা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল।

অনুশীলনে হামজা

টিম সূত্রে জানা গেছে, ফাহামিদুলকে শুরু থেকেই অনেকেই বুলিং করতে থাকেন। টিম বাসে প্রবাসী কল্যাণ সমিতির সদস্য বলা হতো। মাঠ ও মাঠের বাইরে  তাকে শুনতে হয় নানা কটু কথা। মাঠে তাকে অনেক সময় পাস দেওয়া বন্ধ ছিল । গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবণ পেছন থেকে বারবারই নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।  এতে করে ফাহামিদুলের নিজের খেলাটা খেলতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। বাধ্য হয়ে তিনি কাবরেরার কাছে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনি কোচ নাকি সে?’

এরপর তায়েফে প্রীতি ম্যাচের পরের দিন রিকভারি সেশনের জায়গায় হাইইনটেনসিটি অনুশীলনের ফলে চোটের শঙ্কা দেখা দেয় (তায়েফে এসব কারণে জামাল-তপুদের এমআরআই পর্যন্ত করা হয়েছিল)। এ নিয়ে  দুপুরে খাবারের সময় সতীর্থদের কারও কারও সঙ্গে এ নিয়ে উষ্মাও প্রকাশ করেছিলেন ফাহামিদুল। যেহেতু ইতালির উন্নত পরিবেশে বড় হয়েছেন। সেখানকার উন্নত মানসিকতা দেখেছেন। তাই তায়েফে প্রতিকূলতা ফাহামিদুলের কাছে অবাক করারই বিষয় ছিল। তাই অনেক কিছু মেনেও নিতে পারেননি।

পুরো পরিস্থিতিতে দলের ঢাকায় আসার আগে কোচ যখন ফাহামিদুলকে ইতালি ফেরত পাঠাতে বলেন, তখন সবাই অবাক। এমনকি ১৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডকে দলের সঙ্গে রাখার প্রয়োজনবোধ করেননি!

কাবরেরার সঙ্গে ফাহামিদুল

আর তায়েফে এই বুলিংয়ের নেতৃত্বে অন্তত চারজন সিনিয়র খেলোয়াড় ছিল বলে সূত্রে জানা গেছে। এই অবস্থায়  আসছে জুনে প্রবাসী ফুটবলাদের ‘হাট’ বসতে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য জাতীয় দলের শক্তি বৃদ্ধি করা। কিন্তু এমন অবস্থায় সামনে যে ফাহামিদুলের মতো এমন ঘটনা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে?

এ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন থেকে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সবাই যার যার অবস্থান থেকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

তপু বর্মণ (জাতীয় দলের সিনিয়র ফুটবলার)

সিন্ডিকেট কী। এটা কীভাবে কী করে তা আমি জানি না। সৌদি আরবে তো এমনটা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আর আমি তো এসবের মধ্যে নেই। ফাহামিদুল ভালো খেলোয়াড়। সন্দেহ নেই। আমি সবজায়গায় তা বলেছিও। কোচ বলতে পারবে তাকে কেন চূড়ান্ত দলে রাখা হয়নি। 

জুনে প্রবাসী ফুটবলারদের ট্রায়াল হবে বলে শুনেছি। আমি মনে করি যারা যোগ্য তারাই সুযোগ পাবে। সেখানে কোচ সহ সবাই থাকবে। দেশের জন্য যা ভালো তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আমার বিশ্বাস।

ইমরুল হাসান

ইমরুল হাসান (বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জাতীয় টিমস কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান)

প্রবাসী ফুটবলার মানসম্মত হলে সমস্যা নেই। আমি মনে করি যারা বাংলাদেশি অরিজিন, হাই প্রোফাইল রয়েছে, তাদেরই দেশের হয়ে খেলার অধিকার আছে।  এই যেমন জামাল কিংবা তারিক, সবশেষ হামজা খেলছে। এতে দেশের ফুটবল উপকৃত হচ্ছে।

পাশাপাশি দেশে স্থানীয় ফুটবলার তৈরিতে জোর দিতে হবে। যেন এখান থেকেও সামনের দিকে  ভালো ভালো ফুটবলার বেরিয়ে আসে।

সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে

আমাদের কিছু কিছু স্থানীয় ফুটবলারদের সমস্যা আছে। তাদের যথাযথ কাওন্সেলিং করতে হবে বলে আমার মনে হচ্ছে। তাদের বোঝাতে হবে সবাই দেশের হয়ে খেলতে চায়। তবে যারা মানসম্মত খেলোয়াড়, শুধু তারাই দেশের হয়ে খেলবে। এখানে সিন্ডিকেটের কিছু নেই। দেশের স্বার্থে সবাইকে এক হয়ে খেলতে হবে, কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও মানতে হবে। আর আমার মনে হয় এখানে কোচের আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা উচিত।

সামনের দিকে জাতীয় টিমস কমিটির সভাতে নিশ্চয়ই এসব নিয়ে আলোচনা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। 

ফাহাদ করিম

ফাহাদ করিম (বাফুফের সহ-সভাপতি)

দেখুন যারা বাংলাদেশ দলে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাদের ডাকা হয়েছে বা হচ্ছে। জুনের তৃতীয় সপ্তাহে তিন দিনের ট্রায়াল হবে। টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্ট নেবে। আমরা যদি এখান থেকে দুজন হলেও খেলোয়াড় পাই তাহলে ভালো। পাশাপাশি স্থানীয় খেলোয়াড় তৈরিতে আমাদের জোর দিতে হবে।

আর জাতীয় দলে সিন্ডিকেট আছে কিনা আমি জানি না। কোচ অল ইন অল। তবে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে হলে সবাইকে এখানকার আবহাওয়াসহ সব কিছু বুঝে শুনে আসতে হবে। মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য থাকতে হবে। আর ফাহামিদুল প্রসঙ্গে আমি কী বলবো। ওখানে (সৌদি আরবে) কী হয়েছিল জানি না। ফেসবুকে কী লেখালেখি হয়, আমি দেখিও না, জানিও না!


%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%9c%e0%a6%be-%e0%a6%ab%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87

  • Related Posts

    India expels Pakistanis suspends water treaty after Kashmir terror attack

    In a dramatic and sweeping escalation of tensions between India and Pakistan, the Indian government has revoked all visas issued to Pakistani nationals and ordered them to leave the country…

    সারাদেশে ২৪ ঘণ্টায় গ্রেফতার ১৬১৭

    পুলিশের চলমান বিশেষ অভিযানে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে একদিনে ১৬১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১০২১ জন এবং অন্যান্য অপরাধে জড়িত ৫৯৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *