
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মৌলভীবাজারে পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সেজন্য নেওয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। পর্যটকদের বরণ করতে সাজানো হয়েছে চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলের সবগুলো বিনোদনকেন্দ্র। দেশের অন্যতম এই পর্যটন এলাকায় থাকার জন্য রয়েছে প্রায় ২০০ হোটেল-রিসোর্ট। ইতিমধ্যে প্রায় সব হোটেল-রিসোর্টের শতভাগ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জেলার প্রায় সবগুলো আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট ইতিমধ্যে আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন পর্যটকরা। তুলনামূলক ভালো হোটেলগুলোতে কোনও কক্ষ খালি নেই। গত ২৯ মার্চের মধ্যে এসব হোটেল-রিসোর্ট বুকিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। আগামী কয়েকদিনে এখানে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আশা তাদের।
জেলা আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারে দুই শতাধিক হোটেল-রিসোর্টের মধ্যে দুটি পাঁচতারকা এবং পাঁচটি রয়েছে ফোরস্টার মানের। এগুলোর অধিকাংশই শ্রীমঙ্গলে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শ্রীমঙ্গলের চারদিকে সবুজের সমারোহে সজ্জিত সারি সারি চা-বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। পাশাপাশি দার্জিলিং টিলা, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), টি মিউজিয়াম, বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, হাইল হাওর, মৎস্য অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল, নীলকণ্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, চা-কন্যা ভাস্কর্য, বধ্যভূমি-৭১, লাল পাহাড়, শঙ্কর টিলা, গরম টিলা, ভাড়াউড়া লেক, ওয়ার সিমেট্রি, হরিণছড়া গলফ মাঠ, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী পল্লিগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলের পার্শ্ববর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, নুরজাহান চা-বাগান পর্যটকদের বিমোহিত করে। হাওর ও চা বাগানবেষ্টিত এই জেলায় ৯৩টি চা-বাগান ও শতাধিক পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে।
শ্রীমঙ্গলের পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে বেশি রিসোর্ট রয়েছে রাধানগর এলাকায়। রাধানগর পর্যটন কল্যাণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও নিসর্গ নিরব ইকো কটেজের মালিক কাজী সামছুল হক বলেন, ‘রমজান মাসে প্রায় পুরোটা সময়ই একেবারে ফাঁকা ছিল রিসোর্টগুলো। ঈদের টানা ছুটিতে এবার ভালো ব্যবসা হবে বলে আমরা আশাবাদী। সারা বছরই এখানে পর্যটক আসেন। কিন্তু ট্রেনের টিকিট সংকটের কারণে পর্যটকরা টিকিট পান না। ঢাকা-সিলেট পথে একটি নতুন ট্রেন যুক্ত করা হলে এখানে আরও বাড়বে পর্যটক।’
বালিশিরা রিসোর্টের চেয়ারম্যান শহিদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের টানা ছুটিতে এবার ভালো ব্যবসা হবে। প্রায় সব হোটেল-রিসোর্টে বুকিং শেষ। আশা করছি, লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটবে।’
ঈদ ঘিরে ট্যুর গাইডরাও প্রচুর বুকিং পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল ট্যুর অপারেটর অ্যান্ড ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে বিদেশি পর্যটকরাও আছেন। দেশের অন্যান্য অনেক জায়গায় পর্যটকরা ছিনতাই বা বিভিন্ন কারণে হয়রানির শিকার হলেও তাদের কাছে শ্রীমঙ্গল নিরাপদ জায়গা। এবারও এখানে পর্যটকদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
ট্যুর অপারেটর অ্যান্ড ট্যুর গাইড সৈয়দ রিজভী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বেশিরভাগই বিদেশি পর্যটকদের গাইড করি। রমজানে মাসে পর্যটক ছিল না। ঈদের দিন থেকে বিদেশিদের আগমন ঘটেছে।’
পর্যটকদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানালেন ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের পরিদর্শক মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এবার ঈদের ছুটি বেশ লম্বা থাকায় প্রচুর পর্যটক সমাগম হবে। ইতিমধ্যে পর্যটন-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করেছি আমরা। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে নজরদারি রাখা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ থানার পুলিশ, র্যাব সাদাপোশাকেও ট্যুরিস্ট পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় থাকবে। পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করে সুন্দরভাবেই বাড়ি ফিরতে পারেন, সেভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।’
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ জানিয়েছেন, ঈদ ঘিরে প্রতিটি হোটেল-রিসোর্টেই পরিষ্কার-পরিছন্নতা, রং করা, সাজানো-গোছানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বেশিরভাগ হোটেল-রিসোর্ট আগাম বুকিং হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে। ঈদ থেকে আগামী চার দিন পর্যন্ত পরিপূর্ণ থাকবে। আশা করছি, লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটবে।’
পাঁচতারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের পাবলিক রিলেশনস অফিসার পলাশ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার ঈদে প্রত্যাশা বেশি আমাদের। ইতিমধ্যে হোটেলের সব কক্ষ বুকিং হয়েছে।’
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে র্যাব, সাদাপোশাকে ট্যুরিস্ট পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় থাকবে। পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারেন, সেভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি আমরা।’
%e0%a6%ae%e0%a7%8c%e0%a6%b2%e0%a6%ad%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%ac-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%8b%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%9f