
বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার আজ, বুধবার, লোকসভায় ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল পেশ করেছে, এর আগে তারা শীর্ষ সহযোগী দলের সমর্থন নিশ্চিত করেছে। কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বিলটি পেশ করে বলেন, সরকার দেশের এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থের কথা চিন্তা করেই সংশোধিত বিলটি উপস্থাপন করেছে।
এখনো বিরোধীরা এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করছে, তবে সরকারপক্ষের বিশ্বাস, লোকসভা ও রাজ্যসভায় তাদের জয় নিশ্চিত। লোকসভায় বিলটির জন্য মোট ৮ ঘণ্টা সময় নির্ধারিত করা হয়েছে। সরকার চায়, আজই বিলটি পাস করিয়ে আগামীকাল রাজ্যসভায় উপস্থাপন করতে। সংসদের বাজেট অধিবেশন শেষ হচ্ছে শুক্রবার।
ওয়াক্ফ সম্পত্তি হল সেই সকল স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি, যা আল্লাহর নামে নিবেদিত। পুরনো আইনে শুধুমাত্র ওয়াক্ফ বোর্ডই ওয়াক্ফ ঘোষণা করার অধিকারী ছিল, তবে নতুন বিলটি জেলা শাসক বা সমপদমর্যাদার সরকারি কর্মকর্তা এই অধিকার দিতে চায়। নতুন বিলে অমুসলিমদের ওয়াক্ফ বোর্ডের সদস্য করারও প্রস্তাব করা হয়েছে, এবং মুসলিম নারীদেরও বাধ্যতামূলকভাবে সদস্য করার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়াও, সুন্নি মুসলিমদের পাশাপাশি শিয়া, বোহরা এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদেরও বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এবং দেশের সকল ওয়াক্ফ সম্পত্তি একটি পোর্টালের মাধ্যমে নথিভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
১৯৫৪ সালে প্রথম ওয়াক্ফ আইন পাস হয়, এবং ১৯৯৫ সালে তা সংশোধন করে ওয়াক্ফ বোর্ডের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। বিজেপির অভিযোগ, ওয়াক্ফের বিপুল সম্পত্তি একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ভোগ করছে, যার ফলে সাধারণ মুসলিমরা বঞ্চিত হচ্ছে।
আজ বিল পেশ করে কিরেন রিজিজু বলেন, “দেশের ওয়াক্ফ সম্পত্তির সংখ্যা ৪ লাখ ৯০ হাজার থেকে বেড়ে ৮ লাখ ৭২ হাজার হয়েছে। এই সম্পত্তি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে শুধু মুসলিমদের জীবনযাত্রার উন্নতি হবে না, দেশের ছবিও বদলে যাবে।”
বিরোধীরা অভিযোগ করেছে, এই সংশোধনী আইন মুসলিমদের ধর্মীয় বিষয়ে সরকারী হস্তক্ষেপের চেষ্টা, এবং ওয়াক্ফ সম্পত্তি পরিচালনার ভার সরকারের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা। তারা আরও দাবি করেছে, অমুসলিমদের ওয়াক্ফ বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি সংবিধানের পরিপন্থী।
বিরোধীদের দাবি উপেক্ষা করে গত ৮ আগস্ট বিলটি লোকসভায় পেশ করা হয়েছিল। পরে তা যুগ্ম সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়, যেখানে বিরোধীরা ৪৪টি সংশোধনী প্রস্তাব দিলেও সরকারপক্ষের ২৩টি সংশোধনীর মধ্যে ১৪টি গ্রহণ করা হয়, এবং বিরোধীদের কোনো সংশোধনী গ্রাহ্য হয়নি।
বিল পেশ করার আগে বিজেপি নেতৃত্ব তিনটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল, তবে তারা টিডিপি, জেডিইউ এবং এলজেপির সমর্থন নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশে টিডিপি এবং বিজেপির শরিক জনসেনা পার্টিও বিলটির সমর্থন করবে বলে জানিয়েছে।
লোকসভায় বিলটি পাস করার জন্য বিজেপির প্রয়োজন ২৭২ সদস্যের সমর্থন, যাদের মধ্যে ২৪০ জন বিজেপি সদস্য, এবং শীর্ষ শরিকদের সমর্থনও নিশ্চিত হয়েছে। রাজ্যসভায়, এনডিএর শক্তি ১২৫, যেখানে ১১৮ জনের সমর্থন প্রয়োজন।
বিরোধীরা একযোগে এই বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এবং তারা সংসদে বিতর্কের মাধ্যমে তাদের মতামত জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চায়। বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিম সমাজ কালো ব্যাজ ধারণ করে ঈদের নামাজে অংশ নিয়েছে, এবং মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডসহ অন্যান্য সংগঠন বিলটি সংবিধান বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করেছে, কারণ এটি মৌলিক অধিকারকে হরণ করছে বলে তাদের দাবি।
বাংলাদেশ জার্নাল/এজেএইচ
%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%ae-%e0%a6%93-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a7%e0%a7%80%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%aa%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4