‘ম্যারাডোনা-মেসি পারলে আমরা কেন সাফল্য পাবো না’

২০২৪ সালে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ঋতুপর্ণা চাকমার গোলে নেপালের মাঠে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা এসেছিল। কাঠমান্ডুতে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন। ধারাবাহিকতায় মিয়ানমারে এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে দারুণ পারফরম্যান্স ২১ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের। প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে দেশকে নিয়ে যাওয়ার পিছনে তার অবদান কম নয় স্বাগতিকদের বিপক্ষে জোড়া গোল এখনও মনে হয় অনেকের চোখে লেগে আছে। ক্রমেই অন্য উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। মাঠে সাফল্য ও ক্যারিয়ারে নানান দিক নিয়ে রাঙামাটির ফুটবল কন্যার সঙ্গে  কথা বলেছেন তানজীম আহমেদ।

মিয়ানমারে সাফল্য পেয়েছেন কদিন হলো। ঢাকায় আসার রাতেই সংবর্ধনার পাশাপাশি ভুটানে গিয়েও প্রশংসা পাচ্ছেন। এখনও কী মিয়ানমারের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে কিনা..

ঋতুপর্ণা: নাহ, তা হবে কেন। আমরা তো লড়াই করে জিতেছি। ভালো পারফরম্যান্স করে স্বাগতিকদের হারিয়েছি। তাই আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে না। তবে স্বপ্নের এক ম্যাচ খেলেছি বলতে পারেন। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা দলটির বিপক্ষে তাদের মাঠে হারানো সহজ কথা নয়।

ভুটানে যে ক্লাবে খেলতে গেছেন সেই পারো এফসি দেখলাম আপনাদের সংবর্ধনা দিয়েছে..

ঋতুপর্ণা: ওরা আমাদের নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। কোচ-কর্মকর্তারা কেক কেটে সবার সামনে নতুন করে পরিচয় করে দিয়েছে। সতীর্থ খেলোয়াড়রা অভিনন্দন জানিয়েছেন। হংকংয়ের একজন খেলোয়াড়ও ছিল। এশিয়ান কাপে খেলার সুযোগ পেয়েছি বলে সে-ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। নিজের কাছে অন্যরকম ভালো লেগেছে।

এশিয়ান কাপের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। সেখানে চার দেশের তারকার মধ্যে আপনার ছবিও আছে। দেখেছেন নিশ্চয়ই..

ঋতুপর্ণা: হা চোখে পড়েছে। আমাকে যে সেখানে হাইলাইটস করা হয়েছে এতে খুশি। আসলে আমি তো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করি। আমি মনে করি আমাকে হাইলাইট করা মানে দেশকে সামনের দিকে তুলে ধরা।

সামনে তো অস্ট্রেলিয়াতে এশিয়ান কাপ। কী ভাবছেন..

ঋতুপর্ণা: আসলে ভাবার কিছু নেই। এশিয়ান কাপের মঞ্চ অনেক বড়। সেখানে খেলার আগে সেভাবে জোরেশোরে প্রস্তুতি নিতে হবে। তানাহলে পিছিয়ে পড়বো আমরা।

কেমন প্রস্তুতি চান আপনারা…

ঋতুপর্ণা: আমরা সবদিক দিয়ে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ি সুবিধিাদি চাই। বেশি বেশি প্রস্তুতি ম্যাচ চাই। বিশ্বে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে। দেশের বাইরে দীর্ঘমেয়াদে ক্যাম্প হলে ভালো হয়। এছাড়া আরও মানসম্মত খাবার আবাসনসহ অন্যান্য সুবিধাদি তো রয়েছেই।

আবাসনের কথা বলছেন..

ঋতুপর্ণা: আমরা যেখানে থাকি সেই বাফুফে ভবনে কিন্তু অন্য বয়সভিত্তিক মেয়েরাও থাকে। দেখা যায় এক রুমে তখন ৬-৮ জন ঘুমায়। সবার তো এক সঙ্গে অনুশীলন থাকে না। যার ভোরে উঠতে হবে তখন অন্যদের ঘুমে সমস্যা হয়। এছাড়া প্রাইভেসির একটা বিষয় তো রয়েছেই। আর একটা বিষয়। আমরা তো ছেলেদের মতো সুবিধাদি পাই না। ওরা তারকা হোটেলে থেকে ক্যাম্প করে। খাবারও অনেক মানসম্মত। বিদেশি কোচিং স্টাফও অনেক। আমরা চাই এমন সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা।

দেশে তো নিয়মিত লিগ হয় না। ঘরোয়া ফুটবলের কাঠামোতে পরিবর্তন চান কিনা..

ঋতুপর্ণা: অবশ্যই চাই। শক্তিশালী লিগ হলে তখন আমাদেরও উন্নতি হবে। আর্থিক দিক দিয়ে সবাই এগিয়ে যাবে।

আর্থিক দিকের কথা যখন বলছেন আপনারা তো মাসিক ৫০ হাজার বেতন ছাড়া অন্য কিছু সেভাবে পান না। তাও সবাই না। সাফ জিতে এসে ঘোষিত দেড় কোটি টাকা বোনাস এখনও পাননি। মধ্যরাতে সংবর্ধনা পেয়েছেন। শুধু হাতে ফুলই উঠেছে!

ঋতুপর্ণা: হা তা ঠিক। আমাদের খেলার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এটাই আমাদের পেশা। এখন আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হলে নিজেদের কাছেই ভালো লাগবে। তখন খেলাতে মনোযোগও বেশি দেওয়া যায়। মধ্যরাতে সংবর্ধনা ভালো লেগেছে। তবে বোনাসের টাকা কবে পাবো জানি না। এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে এটা মনে করি আমরা পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেলে দেশকে সামনের দিকে আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে।

এসব সুবিধা নিশ্চিত হলেই কী চীন-জাপান কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্ব সেরা দলগুলোর বিপক্ষে লড়াই সম্ভব? ওরা তো শারীরিক-উচ্চতা সহ সব দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে এগিয়ে..

ঋতুপর্ণা: দেখুন আপনাকে বিশ্ব স্তরে খেলতে হলে সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। শুধু ফল চাইলে হবে না। এর জন্য সেভাবে এফোর্টও দিতে হবে। আর শারীরিক সহ সবদিক দিয়ে ওরা অনেক এগিয়ে মানছি। তবে একটা কথা হলো হয়তো সবাই শারীরিক বা উচ্চতার দিক দিয়ে আমরা ওদের মানের হতে পারবো না। তবে টেকনিক-ট্যাকটিসে কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ আছে। ধরেন ম্যরাডোনা-মেসি তো শারীরিক বা উচ্চতার দিক দিয়ে ততটা এগিয়ে নেই। ফুটবলে ফিটনেস-স্ট্রেন্থ-টেকনিক-ট্যাকটিকসের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। এসবের ভর করে ম্যারাডোনা, মেসিরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ম্যারাডোনা-মেসি পারলে আমরা কেন সাফল্য পাবো না। আমাদেরও তাই জোর দিতে হবে।

আপনার বা পায়ের প্রশংসা সবাই করছে। বা পায়ের জাদুতে সবাই মোহিত। সেটপিস কিংবা বক্সের বাইরে থেকে গোল করতে আপনি সিদ্ধহস্ত। এরজন্য আলাদা অনুশীলন করা হয় নাকি..

ঋতুপর্ণা: আলাদা অনুশীলন তো হয়-ই। তবে আমার কাছে মনে হয় আমার বা পায়ের কারুকাজটা ঈশ্বর প্রদত্ত। অনেক সময় অনুশীলন করেও হয় না। তবে আমার শুরু থেকে বা পায়ের নৈপুন্য দেখাতে সমস্যা হচ্ছে না।

এশিয়ান কাপে উঠে আপনি বিদ্রোহী খেলোয়াড় সাবিনা-মাশুরাদের দলে নেওয়ার কথা বলেছেন। কেন?

ঋতুপর্ণা: দেখুন আমি মনে করি অস্ট্রেলিয়ার এশিয়ান কাপে সাবিনা আপু কিংবা মাশুরার মতো  অভিজ্ঞ খেলোয়াড় প্রয়োজন। তারা দলে থাকতে তখন আমরা আরও আত্ববিশ্বাসী থাকবো। দল আরও শক্তিশালী হবো।

কিন্তু তারা তো পিটার বাটলারের অধীনে খেলবেন না। তাদের ছাড়াই তো দল এশিয়ান কাপে গেছে। তারওপর কোচ ও সাবিনাদের দূরত্ব এখন কে ঘোচাবে?

ঋতুপর্ণা: কাউকে না কাউকে তো দূরত্ব ঘোচাতে হবে। সবাইকে একটা সহজ সমাধানে আসতে হবে। সাবিনা আপু-মাশুরাদের তো অবদান কম নয়। আমরা চাই সামনের দিকে দল আরও শক্তিশালী হোক। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগুক।

আপনার প্রসঙ্গে আবার আসি। আপনি ভুটানে লিগ খেলছেন। কোচ পিটার বাটলার তো বলেছেন ভালো দেশে লিগে খেলার যোগ্য আপনি সহ অন্যরা।

ঋতুপর্ণা: এখন সুযোগ পেতে তো হবে। আমিও চাই ভালো ভালো লিগে খেলতে। হয়তো সামনের দিকে সুযোগ আসবে। তখন নিজেকে মে


%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%a1%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b8%e0%a6%bf-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *