লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে কোরবানির ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসকারী প্রায় চারশ পরিবার। অর্থাভাবে কোরবানি দিতে পারেননি কেউই, বরং দুই বেলা খাবার জোটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা। নেই নতুন কাপড়, নেই ঈদের আমেজ। প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেও কোনও সহায়তা আসেনি বলে অভিযোগ তাদের।
শনিবার (৭ জুন) ঈদের দিন দুপুরে রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের হাজিমারা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. শাহজালাল রাহুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি দিনমজুর ছিলাম। এখন ৬ মাস ধরে খুব অসুস্থ। মা, স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে এই আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি। এখানে কেউ কোরবানি দেয় না। কয়েক বছর আগে টিএনও একটা গরু দিয়েছিল, সবাই মিলে ভাগ করে খেয়েছিলাম। এবার কেউ খোঁজও নেয়নি।’
এই আশ্রয়কেন্দ্রের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. বাবুল গাইন, আনোয়ার হোসেন, আয়েশা বেগমসহ আরও অনেকে জানান, ঈদের দিনেও তাদের মুখে হাসি নেই। আশ্রয়কেন্দ্রে বসে কেউ আত্মীয়স্বজনের দেওয়া মাংসের অপেক্ষায়, কেউ কেবল চাল-ডাল রান্না করে দিন কাটাচ্ছেন।
একই চিত্র কারিমিয়া আশ্রয়কেন্দ্র, মিয়ারহাট আশ্রয়কেন্দ্রসহ উপজেলার অন্তত ৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে। প্রায় সাড়ে ৪শ পরিবারই কোরবানির ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। কারিমিয়া আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা রাহাতন বেগম বলেন, ‘১১০টা পরিবার এখানে থাকে। টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় কষ্টে আছি। বাড়িতে থাকলে প্রতিবেশীরা একটু কোরবানির মাংস দিতো। এখানে কে দেবে?’
মিয়ারহাট আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা মরণ আলী হাওলাদার বলেন, ‘নদীভাঙনে ঘর হারিয়ে এখানে উঠে এসেছি। এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এই কষ্টের মাঝে ঈদ করতে হচ্ছে। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, অনেক সময় দুবেলা ভাতই জোটে না।’
হাজিমারা আশ্রয়কেন্দ্র ‘সুখআলয়’-এর সভাপতি চাঁন মিয়া (দুর্জয়) জানান, ২০২২ সালে একবার প্রশাসন থেকে গরুর মাংস এসেছিল। এরপর আর কেউ খবর নেয়নি। শুধু ঈদ নয়, অন্যান্য সময়েও জনপ্রতিনিধিরা আসেন না।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান খান বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ চলছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানি বিষয়ে এখনও সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয়নি।’
বন্যা, নদীভাঙন ও টানা বৃষ্টির কারণে অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রান্না, চলাফেরা ও প্রয়োজনীয় কাজেও বিঘ্ন ঘটছে। এ অবস্থায় ঈদ কোনও আনন্দ নয়, বরং আরও একটি উদ্বেগের দিন হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব অসহায় মানুষের জীবনে।
%e0%a6%88%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%a8%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6-%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%87-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0
Leave a Reply