রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি শরিফুজ্জামান নোমানী হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম রবিকে গুলি করার পর কুপিয়ে রেখে গেছে অস্ত্রধারীরা।
রাজশাহী মহানগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার পঞ্চবটি এলাকায় বরির ওপর হামলা হয়।
শিবির নেতা নোমানী হত্যা মামলার আসামি রবি আওয়ামী লীগের কর্মী। তার বাবার নাম আজিজুল ইসলাম। তাদের বাড়ি নগরের বিনোদপুর-মীর্জাপুর এলাকায়। রবির ভাই শহিদুল ইসলাম শহিদ রাজশাহী মহানগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সভাপতি।
ওসি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, রাতে পঞ্চবটি এলাকায় রবিউলকে কুপিয়ে আহত করা হয়। তাকে গুলিও করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পাঁচ রাউন্ড গুলির খোসা পাওয়া গেছে। কয়েকজন হামলাকারী মোটরসাইকেলে এসে আবার মোটরসাইকেলেই চলে গেছে।
ঘটনার পর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা রবিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে নেওয়া হয়।
এই খবর লেখা পর্যন্ত রবির শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তার বাঁ পায়ের রগ কাটা দেখা গেছে।
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “রবিউলের এক পায়ে গুলি করা হয়েছে। অন্য পা এবং দুই হাতে কোপানো হয়েছে। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়। তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।”
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, রবিউল ইসলামের নামে পাঁচটি মামলা আছে; যার মধ্যে রাবি শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি নোমানী হত্যা মামলাও রয়েছে।
২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাবি ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী বিনোদপুর বাজারে ছাত্রশিবির, ছাত্রলীগ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সেক্রেটারি নোমানী নিহত হন।
এই মামলায় ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রবি। এর আগে ২ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জে জনতার হাতে আটক হয়েছিলেন আত্মগোপনে থাকা রবির ভাই শহিদুল ইসলাম। তাকে পুলিশের সোপর্দ করা হয়েছিল।
২০১৩ সালের ১৬ মার্চ নিজ বাড়িতেই হামলার শিকার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম। সেদিন কয়েকজন যুবক বাড়িতে ঢুকে তাকে কুপিয়ে জখম করেন এবং দুই পায়ের রগ কেটে দেন।
হামলার সময় শহিদুলের বাড়িতে ছিলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও মির্জাপুর নাজমুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইনুল হোসেন, যিনি ওই হামলায় আহত হন। তাদের বাঁচাতে গিয়ে আহত হন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন। সেদিন মাইনুলকেও কোপানোর পাশাপাশি তার বাঁ হাতের রগ কেটে দেওয়া হয়।
নোমানী হত্যা মামলা
ছাত্রশিবির দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে শরিফুজ্জামান নোমানীকে পুলিশের সহযোগিতায় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা কুপিয়ে হত্যা করে।
শরিফুজ্জামান নোমানী নিহত হওয়ার ঘটনায় ২০০৯ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন রাবি ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো চার-পাঁচনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ আলম মহানগরের মতিহার থানায় মামলাটি করেন।
২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাবি ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী বিনোদপুর বাজারে ছাত্রশিবির, ছাত্রলীগ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সেক্রেটারি নোমানী নিহত হন।
ওই মামলায় আসামি করা হয় তৎকালীন রাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন মুন, আইনবিষয়ক সম্পাদক আরিফুজ্জামান রনি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আউয়াল কবীর জয়, কর্মী দ্বীপায়ন সরকার দ্বীপ, সৌরভ, রকি, মইন, জাকারিয়া, জিয়া, সবুজ, আল-আমিন, ফয়সাল, শরীফ, শহীদ, তবারক, কাফাতুল্লাহ, মোশাররফ হোসেন, ইমরান, মামুন, জুয়েল, অনিক, আব্বাস আলী, শামীম, সাহাঙ্গীর, জামাল উদ্দিন, শান্ত এবং সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন আনার।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বাদী ফরহাদ আলমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের পশ্চিম-৬ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে পূর্ব-১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে অন্য শিবিরকর্মীদের আসামি আউয়াল কবীর জয় ও আওয়ামী লীগ নেতা আনার অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।
ঘটনার পরম্পরার বর্ণনায় মামলায় বলা হয়, খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী, কর্মী মাহবুব, আবু রায়হান, শফিকুল ইসলাম, জিন্নাহ এবং আশরাফ তাদের উদ্ধার করতে আসেন। তখন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের টেনে-হিঁচড়ে হলের পূর্ব দিকে নিয়ে যায়। এ সময় জয় ওদের খুন করার নির্দেশ দেন। এর পর রনি ও দ্বীপ নোমানীর ওপর হামলা চালায়। দ্বীপ চাপাতি দিয়ে তার মাথায় কোপ দেয়। নোমানী ডান হাত দিয়ে আঘাত ঠেকানোর চেষ্টা করলে তার হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক পর্যায়ে নোমানী মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অন্য আসামিরা তাকে উপুর্যপরি আঘাত করেন। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে বাদীসহ অন্যরা পালিয়ে যান।
২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহানগর হাকিমের আদালত ৩-এর বিচারক শারমিন সুলতানা সব আসামিকে খালাসা দিয়ে এই মামলা রায় ঘোষণা করেন। আদালতে বাদী দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় (রায়ের দিনও) এবং আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের বেকসুর খালাস দেন।
%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%a4%e0%a6%be-%e0%a6%a8%e0%a7%8b%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%80-%e0%a6%b9%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be-%e0%a6%ae
Leave a Reply