মাছ-গরুর দাম চড়া, মধ্যবিত্তের ভরসা এখন ব্রয়লার মুরগি

দেশের কাঁচাবাজারে মাছ ও গরুর মাংসের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ দৈনন্দিন আমিষ চাহিদা পূরণে পড়েছেন চরম সংকটে। এই পরিস্থিতিতে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য হওয়ায় ব্রয়লার মুরগির দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই।

রাজধানীর শনিরআখড়ায় কথা হয় এক মাংস বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি জানান, “আগে দিনে গরুর মাংস ২০-৩০ কেজি বিক্রি হতো। এখন তা নেমে এসেছে ১০-১২ কেজিতে। অনেকেই এখন আর গরুর মাংস কিনতে পারছেন না। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির বিক্রি দ্বিগুণ বেড়েছে।”

বর্তমানে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা, যেখানে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায় এবং খাসির মাংস ১,২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি কেজি প্রতি ৩০০ টাকা ও পাকিস্তানি জাতের মুরগি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


দেশি মাছের বাজারেও বেড়েছে দাম। বাজারে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১,১০০ টাকায়, ৭০০–৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১,৭০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ২,০০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।

চাষের চিংড়ি ৭৫০–৮০০ টাকা, নদীর চিংড়ি ১,০০০–১,২০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০–৮০০ টাকা, টেংরা ৪০০–৬০০ টাকা, শোল ৭০০–১০০০ টাকা এবং পুঁটি মাছ ৪০০–৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা কেজিপ্রতি ৩২০–৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০–২৪০ টাকা এবং পাঙাশ ২০০–২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা তুলনামূলকভাবে কিছুটা সাশ্রয়ী হলেও আগের তুলনায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।


নগরবাসীদের অনেকেই বলছেন, মাছ ও গরুর মাংসের মূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষের পক্ষে পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। এক চাকরিজীবী ক্রেতা বলেন, “আমরা যারা নির্দিষ্ট আয়ে চলে, তাদের পক্ষে এখন বড় মাছ বা গরুর মাংস কেনা রীতিমতো বিলাসিতা হয়ে গেছে।”


বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে মাছ ও মাংসের সরবরাহ কমে যাওয়া, পরিবহন ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি মূল্যের বৃদ্ধি এবং খামার পর্যায়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াই এই মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ।

তারা মনে করেন, বাজারে নজরদারি বাড়ানো এবং উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনে ব্যয় কমিয়ে আনার মাধ্যমে এই সংকট কিছুটা হলেও লাঘব করা সম্ভব।


ব্রয়লার মুরগি আপাতত সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী আমিষের উৎস হলেও স্বাস্থ্যসচেতন অনেকেই এই উৎসকে পুরোপুরি স্বাস্থ্যকর মনে করেন না। একজন শিক্ষিকা বলেন, “বাধ্য হয়েই এখন ব্রয়লার কিনছি। কারণ গরুর মাংস বা বড় মাছ কিনে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।”


সাশ্রয়ী দামে প্রোটিনের উৎস সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। বাজার তদারকি জোরদার, খামারিদের উৎসাহ দেওয়া, উৎপাদন খরচে ভর্তুকি এবং পরিবহন খাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপর থেকে চাপ কমিয়ে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রোটিনের সাশ্রয়ী উৎস সহজলভ্য রাখার দিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ


%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9b-%e0%a6%97%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%b0-%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%9a%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%be-%e0%a6%ae%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *