নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মিছিল, আটক ২

গাজীপুরে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্রসহ মিছিল করেছেন নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীরা। দুটি মিনিবাস ও দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে শতাধিক মানুষ এ মিছিলে অংশ নেন। এ সময় মির্জাপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই জনকে আটক করেছে। তবে দলের গাজীপুর মহানগরীর সভাপতি বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করছেন।

বুধবার (৭ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জয়দেবপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর বাজার রোডে নাগরিক ঐক্য পার্টির ব্যানারে লাঠি ও চাইনিজ কুড়ালসহ মিছিল করে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বাজারের ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, মির্জাপুর বাজারের বর্তমান ইজারাদার মোবারক হোসেন মুসল্লি ও মগবুল মুসল্লির বিরুদ্ধে নাগরিক ঐক্যর নেতাকর্মীরা এই মিছিল করেন। পূর্বে গাজীপুর সদর উপজেলা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি আব্দুল গনি মির্জাপুর বাজার থেকে ইজারা তুলতেন। জুলাই আন্দোলনের পর বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে মির্জাপুর বাজার ভাগ করে নেন। কিন্তু তিনি তার অংশের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইজারা তুলতে পারেন না। বিএনপির লোকজনই বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইজারা তুলতেছে। মির্জাপুর বাজারে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্রসহ মিছিল করায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মিছিলকারীদের হাতে লাঠি, চাইনিজ কুড়াল ও লাঠি ছিল। দুইটি মিনিবাস ও দুইটি অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রায় ১০০ থেকে ১২০ জন মিছিলে অংশ নেন।

বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন মিছিলকারীদের প্রতিরোধ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে মিছলকারীদের নিয়ে আসা নাগরিক ঐক্যের গাজীপুর মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক নাইম ও অ্যাম্বুলেন্স চালক ফরহাদকে অ্যাম্বুলেন্সসহ আটক করে। এ সময় নাগরিক ঐক্যের ব্যানার ও লাঠি জব্দ করেন তারা। খবর পেয়ে জয়দেবপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আটক দুই জনকে তাদের হেফাজতে নেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মির্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

গাজীপুর সদর উপজেলা নাগরিক ঐক্যর সভাপতি আব্দুল গনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে মিছিল হয়েছে। আমি এ জায়গায় ছিলাম না, আমি জানিও না। আমি আগে বাজার ইজারা নিয়েছিলাম। জুলাই আন্দোলনের পর বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে ইজারা নিয়েছিলাম। যে অংশ আমাদেরকে দিয়েছে ওই অংশেও তারা আমাদেরকে বসতেই দেয় না। ওরাই সব ইজারা (কালেকশন করে) তুলে এবং মাতবরি করে।

গাজীপুর মহানগর নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও জেলা অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ডা. রাশেদুল হাসান রানা বলেন, আপনি আমার ফেসবুক ঘাঁটলে দেখবেন, আমি প্রতিনিয়তই ফ্রি চিকিৎসা দেই। প্রতিদিনই বিভিন্ন ওয়ার্ডে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে ফ্রি ওষুধ দেই। বুধবার সকালে দুটা অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছি সদর উপজেলার মির্জাপুর বাজারে। ওই বাজারে আমরা একটি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করবো। ওই জায়গায় নাগরিক ঐক্যের একটি কমিটি আছে। আমার দলীয় নেতাকর্মীরা ওই জায়গায় উপস্থিত ছিল। ওই সময়ে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা বাজারে একটা মিছিল নিয়ে আসছে। মিছিলের ভেতরে কিছু সংখ্যক লোক ঢুকিয়ে দিয়েছে নামধারী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু লোকজন। তারা অস্ত্র দিয়ে মিছিলে লোক ঢুকাইয়া দিয়ে ওইটার ফুটেজটা শুধু ভিডিও করেছে। পুরো ভিডিওটি না করে ওই ফুটেজটা শুধু ছাড়ছে এবং বলতেছে নাগরিক ঐক্যের লোকেরা বাজার দখল করতে গেছে।

তিনি বলেন, পূর্বে মির্জাপুর বাজার নাগরিক ঐক্যের সদর উপজেলার সভাপতি আব্দুল গনি প্রায় পাঁচ বছর  নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাদের (নামধারী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু লোক) যে একটা ক্ষোভ ছিল বাজারটা তারা নেবে। এই বাজারটা দখল করার জন্য তারা এই কাহিনীটা করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ গাজীপুর মহানগরের বাসন থানার সাধারণ সম্পাদক নাইম এবং অ্যাম্বুলেন্স চালক ফরহাদকে অ্যাম্বুলেন্সসহ আটক করে। অ্যাম্বুলেন্স চালককেও আটক করেছে- অ্যাম্বুলেন্স কেন এই জায়গায় (বাজারে) নিয়ে এসেছেন। ওসিকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন আটক করেছেন। ওসি বলতেছে, ওই জায়গায় অস্ত্রের মহড়া। তারপর আমি বলি, এই লোকগুলো আমার কমিটির লোক না। আপনি ভিডিও ফুটেজে দেখেন, তারা আমার কমিটির লোক কি না। গণ্ডগোল দেখে আমিসহ অন্য চিকিৎসকরা আর ওই জায়গায় যেতে পারিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল পর্যায়ের লোক জানে আমি বিনামূল্যে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করতেছি এবং বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করি।

এই নেতা আরও বলেন, বাজার ইজারার জন্য গাজীপুর সদর উপজেলা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি আব্দুল গনি ভাই ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা দিয়া রাখছে। এই টাকা যেন উনি নিতে না পারে এ জন্য তারা এই কাহিনী করেছে। আপনারা দেখবেন, কিছুদিন আগে আমাদের এক মানববন্ধনে বিএনপির লোকেরা হামলা করেছে। আপনারা এটা জানেন কি না। যখন নাগরিক ঐক্যের লোকেরা ওই জায়গায় ভালো কিছু কাজের জন্য যায় তখন তারা বিভিন্ন লোক দিয়া বিভিন্ন জিনিস ঢুকাইয়া এরকম করে।

মির্জাপুর বাজারের বর্তমান ইজারাদার মোবারক হোসেন মুসল্লি এবং মগবুল মুসল্লির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তাদের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন রিজভীর মোবাইল ফোনেও একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু তাহের মুসল্লি বলেন, আমি উত্তরায় ছিলাম। আমি জেনে তারপর বলতে পারবো।

জয়দেবপুর থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, এ বিষয়ে এখানও কেউ কোনও অভিযোগ দেয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদেরকে আমরা সরাইয়া নিয়ে এসেছি, যাতে সংঘর্ষ না হয়। বর্তমানে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।


%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%90%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%aa

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *