সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ১৬ মে ২০২৫

জাপান এখন এক শান্তিপ্রিয় দেশ। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের সভ্য ও উন্নত দেশগুলোর একটি জাপান। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বাযুদ্ধে পরাজয় বরণের আগ পর্যন্ত জাপান ছিল আগ্রাসী এক দেশ। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বচলাকালে দেশের মানুষের ওপর যে ভয়বহতা নেমে আসে তা থেকে জাপান যুদ্ধনীতি থেকে সরে আসে। দেশের অভ্যন্তরে ঐক্য ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হয়। জাপানের এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে আমেরিকার হিরোশিমা ও নাগাসাকি হামলার প্রভাব।
অনেক দিন ধরে চলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে জাপানের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। দেশটির দোকানগুলো খাবার বা পানীয় জল কিছুই পাওয়া যাচ্ছিলো না। উৎপাদন বাড়াতে খেলার মাঠ ও উঠানেও সবজি চাষ শুরু করেছিল তারা। পেট্রোলের নাম এতোটাই বেড়ে গিযেছিল যে সাধারণ মানুষের তা কেনার সামর্থ্য ছিল না। জাপানের রাস্তাঘাটে কোনো পার্সোনাল গাড়ি ছিল না। রাস্তায় শুধু পায়ে হাঁটা মানুষ আর মিলিটারি চলাফেরা করতো। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকাল ৭ টায় জাপানি রাডারে দক্ষিণ দিক থেকে আসা একটা আমেরিকান বিমান দেখা যায়। সে সময় জাপানে সতর্কতা জারি করা হয়। এবং সমস্ত রেডিও কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সকাল ৮ টা নাগাদ বিমানটি জাপান থেকে চলে যায়। আসলে এই বিমানটি এসেছিল জাপানের পরিস্থিতি দেখতে। যে স্থানে পারমানবিক বোমাটি ফেলার কথা ছিল সেখানের আবহাওয়া কেমন, সেখানে অন্য কোনো যুদ্ধ বিমান আছে কিনা, এসব পরিস্থিতি দেখে বিমানটি ফিরে যায়। তবে জাপানি এয়ারফোর্স বা সৈনিকরা আমেরিকানদের এই অভিসন্ধি সম্পর্কে কিছুই বুঝতে পারেননি। কারণ সেই সময় এমন বহু শত্রু পক্ষের এমন যুদ্ধ বিমান টহল দিতে আসতো। তাই আক্রমণের কোনো আভাস না পেলে তাদের ওপর আগে থেকে অ্যাটাক করা হতো না। বিমানটি ফিরে যাবার পর সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়। রেডিও কার্যক্রম আবার শুরু হয়।
কিছুক্ষণ পর জাপানের আকাশে আরও একটা যুদ্ধ বিমান আসার সিগন্যাল পাওয়া যায়। জাপানের সামরিক সদস্যরা ভাবতে থাকেন এবারও হয়তো এই বিমান জাপানের অবস্থা দেখতেই এসেছে। জাপানি এয়ারফোর্স চাইলেই এই বিমানটি আটকাতে পারতো। এই প্লেনটির মধ্যেই রাখা ছিল ১০ ফুট ২৮ ইঞ্চি লম্বা চার টন ওজনের নীল ও সাদা রঙের পারমাণবিক বোমা। যার নাম ছিল Little Boy.
সকাল ৮টা বেজে ১৫ মিনিটে জাপানের হিরোসিমার চেহারা পুরোপুর বদলে যায়। যখন আমেরিকান প্লেন থেকে বোমা ফেলা হয় হিরোশিমা শহরে ওপর। বোমাটি পড়তে প্রায় ৪৩ সেকেন্ড সময় নেয়। এই সময় হাওয়ার গতি এতোই বেশি ছিল যে, বোমার গতি বদলে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ২৫০ মিটার দূরে একটি সার্জিক্যাল ক্লিনিকের ওপর বিষ্ফোরিত হয়। বোমা ফাটার সঙ্গে সঙ্গে সেই স্থানের তাপমাত্রা ১০ লক্ষ সেন্টিগ্রেটে পৌঁছে যায়। হিরোশিমা শহরের প্রায় ৮০ হাজার লোক সাথে সাথে মারা যায়।
হিরোশিমা আক্রমণের মাত্র তিন দিন পর ৯ আগস্ট জাপানের আরও একটি শহর নাগাসাকিতে আমেরিকা একটি বোমা ফেলে। যেটা নিচে পড়তে মাত্র ৫২ সেকেন্ড সময় নেয়। যে জায়গায় বোমা পড়েছিল তার আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিনত হয়। নাগাসাকি শহরের ক্যাথলিক গির্জার ঠিক ওপরে ফেলা আণবিক বোমা সেদিনই ৭০ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিকের প্রাণ হরণ করেছিল এবং দীর্ঘমেয়াদি সময়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল আরও অনেক বেশি।
জাপানের প্রতিশোধের পথে হাঁটেনি। তারা যুদ্ধবিরোধি এক শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে বিশ্বে ফের মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। সম্রাজ্য হারালেও জাপান হয়ে উঠেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে শান্তির প্রতীক।
ঢাকা/লিপি
%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%87-%e0%a6%86%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%80-%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6
Leave a Reply