চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চীন, ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে সরাসরি তৈরি পোশাক রফতানির নতুন পথ খুলতে চলেছে। ভারতকে এড়িয়ে আকাশপথে পণ্য পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের অবকাঠামো প্রস্তুত করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকারের অনুমোদন পেলে চালু হবে বহুল প্রতীক্ষিত আকাশপথে পণ্য পরিবহন। এ লক্ষ্যে বিমানবন্দরে ২৭০ টন ধারণক্ষমতার একটি কার্গো স্টেশন প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি দুটি আধুনিক স্ক্যানিং এবং একটি ওজন মাপার যন্ত্র সচল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শাহ আমানত বিমানবন্দরের কার্গো শেডে ২৫০ টন আমদানি এবং ২০ টন রফতানি পণ্যের ধারণক্ষমতা আছে। ২০২২ সাল থেকে বিমানবন্দরে আমদানি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। তবে যাত্রী ফ্লাইটে সীমিত আকারে পণ্য আমদানি-রফতারি হচ্ছে। বিমানবন্দরের কার্গো স্টেশনটি অনেকটাই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েছিল। সম্প্রতি নতুন করে সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখন সপ্তাহে বড় দুটি কার্গো ফ্লাইট এলেও তার পণ্য হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হবে স্টেশনটি। শিগগিরই চীন, ইউরোপ ও আমেরিকায় পণ্য আমদানি-রফতানির জন্য কার্গো ফ্লাইট চালু হবে। তবে কখন থেকে ফ্লাইট চালু হবে, সে বিষয়ে এখনও চিঠি পাইনি আমরা।’
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, একসময় চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে থাই এয়ার এশিয়া, সিল্ক এয়ার, কুয়েত এয়ার, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, এমিরেটস এয়ারলাইনসের কার্গো ফ্লাইট চলাচল করতো। সবশেষ ২০২২ সাল পর্যন্ত দুটি কার্গো ফ্লাইট চালু ছিল। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য না পাওয়ায় ওই বছর ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে যাত্রী ফ্লাইটে সীমিত আকারে পণ্য আমদানি-রফতারি হচ্ছে। এর মধ্যে ২০২১ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বিমানবন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমাণ আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন হয়েছে। ২০২১ সালে ৫৭ লাখ ৫২ হাজার ৬৩৪ কেজি আমদানি পণ্য থেকে চার কোটি ৫৪ লাখ ৮৮ হাজার ৩২৬ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। ২০২২ সালে ৭৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭৮৫ কেজি আমদানি পণ্য থেকে চার কোটি ৫৭ লাখ ৪৩ হাজার ১৩০ টাকা রাজস্ব আসে। ২০২৩ সালে আমদানি কমে দাঁড়ায় দুই লাখ ৩২ হাজার সাত কেজিতে, যেখান থেকে রাজস্ব আদায় হয় ২৫ লাখ ৫১ হাজার ১৪৫ টাকা। ২০২৪ সালে তিন লাখ ৬৭ হাজার ৯৫৮ কেজি পণ্যের আমদানি থেকে রাজস্ব আসে ২৪ লাখ ৬০ হাজার ৬২৭ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এক লাখ ৯৮ হাজার ৩০৫ কেজি পণ্যের আমদানি থেকে সাত লাখ নয় হাজার ৪৮০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।’
একই সময়ে পণ্য রফতানি ছিল তুলনামূলক ইতিবাচক। ২০২১ সালে ১৫ লাখ ৯১ হাজার ২৬৬ কেজি রফতানি পণ্য থেকে রাজস্ব আসে ৫২ লাখ ৬১ হাজার ৭৪৩ টাকা। ২০২২ সালে রফতানি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৭১ কেজিতে, রাজস্ব আদায় হয় দুই কোটি ২৭ লাখ ৫৯ হাজার ৯০১ টাকা। ২০২৩ সালে ৩০ লাখ ৫১ হাজার ৯২৪ কেজি রফতানি পণ্য থেকে এক কোটি ৯৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৫৩, ২০২৪ সালে ৪৩ লাখ ১২ হাজার ৩৮৯ কেজি পণ্য রফতানি থেকে দুই কোটি ৬৩ লাখ ৭২ হাজার ৫১১ এবং চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সাত লাখ ৩২ হাজার ৬৩৬ কেজি রফতানি থেকে ৫১ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৫ টাকা রাজস্ব আদায় হয়।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল হওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য ইতিবাচক। এতে আমরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারবো। সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। শিগগিরই চীন, ইউরোপ ও আমেরিকায় পণ্য আমদানি-রফতানির জন্য কার্গো ফ্লাইট চালু করতে পারবো আমরা।’
এজন্য বিমানবন্দরে কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ, কার্গো উইং মেশিন কেনা এবং আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজনের মাধ্যমে কার্গো কার্যক্রমে গতি আনার চেষ্টা চলছে জানিয়ে শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর আরও বলেন, ‘পাশাপাশি জার্মানির এয়ারপোর্ট কনসাল্টিং পার্টনার জিএমবিএইচ কর্তৃক বিমানবন্দরের জন্য একটি আধুনিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলছে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রামে চার শতাধিক পোশাক কারখানা এবং ইপিজেডগুলো এতদিন আকাশপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। ফলে রফতানির জন্য পণ্য ঢাকা বিমানবন্দরে পাঠাতে হতো। যা ছিল সময়, ব্যয়বহুল ও জটিলতাযুক্ত।
আন্তর্জাতিক বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে যদি সরাসরি ইউরোপ বা আমেরিকায় আকাশপথে পণ্য পরিবহন সম্ভব হয়, তবে ব্যবসায় গতি বাড়বে। সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। কার্গো ফ্লাইট চালু করার জন্য এখনই গুরুত্বপূর্ণ সময়।’
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক। এতদিন যেসব ব্যবসায়ী ঢাকা থেকে পণ্য আমদানি-রফতানি করতেন, তারা এখন চট্টগ্রামে এই সুবিধা পাবেন। এতে সময় অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে।’
%e0%a6%9a%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%aa%e0%a7%8d
Leave a Reply