খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও কুয়েটের ঘটনায় বহিষ্কৃত মোল্লা মাহবুবুর রহমান হত্যার নেপথ্যে ৭টি কারণ সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ। তবে, হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনো কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। মামলা হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
শনিবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর আতাহার আলী এসব তথ্য জানান। এর আগে, দুপুরে এ ঘটনায় নিহতের বাবা মো. আব্দুল করিম মোল্লা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু সালেহ রায়হান বলেন, ‘‘আমরা একাধিক বিষয় সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছি। হত্যাকাণ্ডে একাধিক অস্ত্রের ব্যবহার ও তিন জন অংশ নিয়েছিলেন। তারা একটি মোটরসাইকেলে করে আসেন। তাদের একজনের মাথায় হেলমেট ছিল। এ ঘটনায় জড়িতদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।’’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘দলীয় কোন্দল, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা, চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, চরমপন্থিদের সঙ্গে যোগাযোগ ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সঙ্গে মারামারির বিষয়গুলো সামনে রেখে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ আগস্ট খুলনা বিএল কলেজ রোডে বিএনপি অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় ২১ আগস্ট বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন মাহবুবুর। মামলায় ৫২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য প্রায়ই তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হতো।
এছাড়া, গত বছরের ১ অক্টোবর মানিকতলা শহীদ মিনার চত্বরে ওয়ার্ড বিএনপি আয়োজিত সুধী সমাবেশে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এ ঘটনায় যুবদল নেতা জাকির হোসেন বাদী হয়ে ৪৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
জাকিরের সঙ্গে মাহবুবুরের ভালো সম্পর্ক থাকায় আসামিরা ধারণা করেন, জাকিরকে দিয়ে মামলাটি করিয়েছেন মাহবুবুর। এ ঘটনায় জাকির ও মাহবুবুর উভয়কেই হুমকি দেওয়া হয়। হুমকি পাওয়ার পর থেকে জাকির বাড়ির বাইরে বের হন না। মাহবুবুরকেও নিষেধ করেন। কিন্তু, মাহবুবুর কথা শোনেননি।
সূত্র আরো জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২-৩টি গ্রুপের সঙ্গে মাহবুবুরের বিরোধ ছিল। এছাড়া, মাদক কেনাবেচা এবং চাঁদাবাজি নিয়েও একাধিক গ্রুপের টার্গেট ছিল মাহবুব। স্থানীয় চরমপন্থিদের সঙ্গেও বিরোধ সৃষ্টি করে রেখেছিলেন তিনি।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সঙ্গে মারামারির ঘটনায় অস্ত্র হাতে একটি ছবি ভাইরাল হওয়ার পর মাহবুবুরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে, ওই ঘটনার পরেও ছাত্রদের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল।
মাহবুবুর রহমানের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পুলিশ প্রতি মাসে ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠাত। তালিকাভুক্ত অপরাধী ও প্রভাবশালীদের তালিকায় তার নাম ছিল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় তাকে ওয়াচে রাখত পুলিশ।
জানতে চাইলে দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর আতাহার আলী বলেন, ‘‘উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও আরো কিছু বিষয় সামনে রেখে তদন্ত চলছে। তবে, তদন্তের স্বার্থে আপাতত কিছুই বলা যাচ্ছে না। থানা পুলিশের দুটি এবং গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম তদন্তে কাজ করছে।’’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ভ্যান চালককে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘ঘটনার সময় ওই ভ্যান চালককে মাহবুবুর ডেকে নিয়ে গাড়ি পরিষ্কারের কাজে অংশ নিতে বলেন। ওই ভ্যান চালকের সামনে একটি মোটরসাইকেল আসা তিন ব্যক্তি মাহবুবুরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। দুটি গুলির একটি তার মুখের ডান পাশে এবং মাথার ডান পাশে বিদ্ধ হয়। এরপর তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তার দুই পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সন্ত্রাসীরা ওই ভ্যান চালককে লক্ষ্য করে আরো দুটি গুলি ছুঁড়ে। কিন্তু, ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।’’
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১১ জুলাই) দুপুরে নগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়ায় নিজ বাড়ির সামনে যুবদলের সাবেক নেতা মোল্লা মাহবুবুর রহমানকে প্রকাশ্যে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
আরো পড়ুন: যুবদলের বহিষ্কৃত সেই নেতাকে গুলির পর রগ কেটে হত্যা
%e0%a7%ad-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%a3-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a7%87-%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%96%e0%a7%87-%e0%a6%a4%e0%a6%a6%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%aa
Leave a Reply