ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে পশ্চিম তীরের তুলকারম, নূর শামস ও জেনিনের শরণার্থী শিবিরগুলো কার্যত জনশূন্য হয়ে পড়ছে। স্বাধীন মানবাধিকার সংগঠন বাতসেলেমের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর এসব এলাকায় অভিযান চালিয়ে অন্তত ৪০ হাজার ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
৫১ বছর বয়সী মালেক লুতফি বলেন, ছয় মাস আগে আমাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এখনও আমরা ঘরে ফিরতে পারিনি।
তুলকারম শহরে একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে কোনোমতে বাস করছেন তিনি। তবে নিজের ইলেকট্রনিক মেরামতের দোকানটিতে ফিরতে না পারায় আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন লুতফি বলেন, ফিরে গিয়ে কিছু জিনিস আনার চেষ্টা করি। কিন্তু হাতে গোনা দুই ঘণ্টায় কতই বা আনা যায়?
বাতসেলেম জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ‘নিরাপত্তা রক্ষার নামে’ চালানো অভিযানগুলো আসলে বসতঘর ধ্বংস এবং সাধারণ ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদে পরিণত হয়েছে।
তুলকারমের গভর্নর আবদুল্লাহ কামিল বলেন, শিবিরে এখন আর কিছুই নেই। এটি একটি ভুতুড়ে জায়গায় পরিণত হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে ১০৬টি বাড়ি ও আরও ১০৪টি অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। এটি নিছক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, নিরাপত্তার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।
এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা জেনিন ও তুলকারমে মতো ‘চরমপন্থার কেন্দ্রস্থলে’ অভিযান চালাচ্ছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এমন ভবন ধ্বংস করা হচ্ছে যাতে বাহিনী নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। বিকল্প ব্যবস্থা বিবেচনার পরেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে ঘটনাস্থলে রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভারী যানবাহন দিয়ে বাড়িঘর গুঁড়িয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। বাসিন্দারা চেয়ার, কম্বল ও রান্নার সরঞ্জাম গাড়িতে তুলে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছেন।
তুলকারমে ফিরে আসা লুতফি বলেন, যে ধ্বংস আমি দেখেছি, তা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে, বিদ্যুৎ নেই, অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত। আবার শুরু করতে গেলে অনেক সময় লাগবে।
২০০০-এর দশকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর এটিই পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান বলে মনে করা হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে ড্রোন, হেলিকপ্টার ও কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ট্যাংক ব্যবহৃত হয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চললেও পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বাতসেলেমের জনসংযোগ পরিচালক শাই পারনেস বলেন, ইসরায়েল গাজায় প্রয়োগ করা কৌশলগুলো এখন পশ্চিম তীরেও প্রয়োগ করছে। এর মধ্যে রয়েছে ঘরবাড়ি ও অবকাঠামোর সুপরিকল্পিত ধ্বংস এবং বেসামরিক জনগণকে সামরিক অঞ্চলের বাইরে জোরপূর্বক তাড়িয়ে দেওয়া।
ইসরায়েলের ডানপন্থি রাজনীতিকরা দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। যদিও সরকার দাবি করছে—এই অভিযান কেবল ‘সন্ত্রাসবিরোধী’।
গভর্নর কামিল বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত পরিবারগুলো মসজিদ, স্কুল এবং আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গাদাগাদি করে আশ্রয় নিচ্ছে। বাস্তুচ্যুতদের জন্য তা চরম মানবিক সংকট ডেকে আনছে।
%e0%a6%ad%e0%a7%81%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a7%87-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%b0%e0%a7%82%e0%a6%aa-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%9a%e0%a7%8d%e0%a6%9b
Leave a Reply