ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে এ কর্মকর্তাকে ঢাকা উত্তর সিটি থেকে সরিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক করা হয়েছে।
আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এই হিসেবে তিনি মাত্র তিন মাস আট দিন এই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন।
এর আগে গত এপ্রিলে একই দিনে পৃথক দুটি আদেশে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গত ১৬ এপ্রিলের ওই আদেশে মো. নুরুজ্জামানকে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পরিচালক এবং মো. মনিরুজ্জামানকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়েছিল।
ঢাকা উত্তর সিটির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সঙ্গে সিইও কামরুজ্জামানের করপোরেশনের বিভিন্ন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে মতানৈক্য চলছিল। ঢাকা উত্তর সিটির একমাত্র স্থায়ী হাট গাবতলী পশুর হাটের ইজারা দেওয়া নিয়েও প্রশাসকের সঙ্গে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মতবিরোধ তৈরি হয়। হঠাৎ বদলি হয়তো এসব মতানৈক্যের কারণে করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন অন্য কর্মকর্তারা।
এদিকে গাবতলী হাট ইজারার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রধান ছিলেন সিইও কামরুজ্জামান। তিনিসহ মূল্যায়ন কমিটিতে থাকা ডিএনসিসির পাঁচটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং নিরীক্ষা কর্মকর্তা মিলে গত ৭ এপ্রিল সভা করে গাবতলী হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা মেসার্স আরাত মোটরকে ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন। তবে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দেওয়ার পরিবর্তে প্রশাসক খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত দেন। কারণ হিসেবে তখন প্রশাসক এজাজ জানিয়েছিলেন, ইজারার দরপত্রপ্রক্রিয়ায় ভুল ছিল।
গত ৩০ এপ্রিল গাবতলী হাটের ইজারা নিয়ে ‘সর্বোচ্চ দরদাতা ইজারা পাননি, গাবতলী হাটে খাস আদায় করছেন “পছন্দের” ব্যক্তিরা’ শিরোনামে অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, গাবতলী হাটের দরপত্রপ্রক্রিয়ায় প্রশাসকের পছন্দের ব্যক্তি সর্বোচ্চ দরদাতা হতে পারেননি। তাই তিনি দরপত্র আহ্বানে প্রক্রিয়াগত ভুল দেখিয়ে ইজারার পরিবর্তে খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। বাস্তবে খাস আদায়ের নামে ওই হাট থেকে হাসিল আদায় করছেন প্রশাসকের পছন্দের দরদাতা ও তাঁর লোকজন।
অবশ্য বদলি ও প্রশাসকের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান। তিনি আজ সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি সরকারের একজন আজ্ঞাবহ কর্মচারী। সরকার যেখানে আমাকে পদায়ন করবে, আমি সেখানে যেতে বাধ্য। সিটি করপোরেশন ভালো চলুক, এটাই আমি চাই।’ এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না বলেও জানান।
এদিকে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের নিয়োগ ও দায়িত্ব পালন নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। ২০ মে এজাজের অপসারণের দাবিতে গুলশান-২–এ ঢাকা উত্তর সিটির নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেছেন গণ অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীরা। সেদিনের কর্মসূচি থেকে মোহাম্মদ এজাজকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছিল গণ অধিকার পরিষদ।
এদিকে গত এপ্রিলে সাবেক প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান ও সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামানকে হঠাৎ বদলি করার পেছনেও প্রশাসকের সঙ্গে তাঁদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি কাজ করেছে বলে মনে করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, প্রশাসকের সঙ্গে তৎকালীন প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার গাবতলীর হাটের ইজারা দেওয়া নিয়েই দ্বন্দ্ব হয়েছিল। আর প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার দ্বন্দ্ব হয়েছিল মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের জায়গায় অবৈধভাবে তৈরি হওয়া মার্কেট ভবন উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া নিয়ে। পাশাপাশি গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) স্বয়ংক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েও বিরোধিতা করেছিলেন ওই কর্মকর্তা।
কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কারণে প্রশাসকের সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে দূরত্ব দিন দিন বাড়ছে। প্রশাসকের প্রতি কর্মকর্তাদের অসন্তোষও তৈরি হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে দাপ্তরিক কার্যক্রমে। সর্বশেষ সিইও কামরুজ্জামানের হঠাৎ বদলিতে এর প্রভাব আরও প্রকট হতে পারে।
সাবেক প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তাঁকে ও মো. মনিরুজ্জামানকে বদলি করা নিয়ে বলেন, গাবতলী হাট ইজারায় নীতিমালা যথাযথ অনুসরণ করেই সর্বোচ্চ দরদাতা আরাত মোটরসকে ইজারা দিতে প্রশাসকের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসক তার ইচ্ছা অনুযায়ী তৃতীয় দরদাতা রাইয়ান এন্টারপ্রাইজকে ইজারা দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। এতে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের ওপরে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশাসক অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাঁকে ও মো. মনিরুজ্জামানকে তাৎক্ষণিক অন্যত্র বদলি করে দেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমএইচ
%e0%a6%a2%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%89%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%87%e0%a6%93-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%ae
Leave a Reply