ইউরোপিয়ান ফুটবলের রাজসিংহাসনে আজ উঠল এক নতুন নাম। শতাব্দীর স্বপ্ন, অসংখ্য রাতের অপেক্ষা আর ভাঙা-গড়ার গল্প পেরিয়ে অবশেষে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) হাতে উঠল ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক, চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি। যেখানে পরিসংখ্যান নয়, লেখা হলো জীবন্ত ইতিহাস। আর সেই মহেন্দ্রক্ষণ হলো জার্মানির হৃদয়ে, মিউনিখের ঐতিহাসিক অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায়।
ঠিক ৩০ বছর আগে এই শহরে ফরাসি ক্লাব মার্শেই ছুঁয়েছিল শ্রেষ্ঠত্বের চূড়া। এবার আরও জ্বলন্ত দাপট নিয়ে পিএসজি করল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। শনিবার (৩১ মে) দিবাগত রাতে প্রতিপক্ষ ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলের একপেশে ব্যবধানে হারিয়ে শুধু ট্রফিই নয়, জিতে নিল ট্রেবল জয়ের দুর্লভ সম্মান। যেন ফুটবল দেবতা নিজেই লিখেছেন এই গল্প; গৌরবের, প্রতিশোধের আর পূর্ণতার।
বছরের পর বছর তারকা দিয়ে গড়া স্কোয়াড গড়েও যেটা অধরা ছিল, এবার পিএসজি তা ছুঁলো এক ছন্দময় দলের কাব্যে। গ্যালাকটিকো নয়, বরং পরিকল্পনা আর পারফরম্যান্সে ভরা একটি গাঁথা। মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে যুগ পেরিয়ে এবার উঠে এসেছেন ডেম্বেলে, ভিতিনহা, দুয়ে, হাকিমি, কাভারাত্সখেলিয়া আর বারকোলা। ফুটবলের ক্যানভাসে এদের রঙ যেন ছিল নতুন কোনো সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি।
ম্যাচ শুরুতেই যেন আগুন ঝরাল প্যারিসিয়ানরা। ১২ মিনিটেই ভিতিনহার নান্দনিক পাসে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে দুয়ে উপহার দিলেন নিখুঁত এক পাস। হাকিমি তখন ঠিক যেন নিঃশব্দে ছুরির মতো বল ঢুকিয়ে দিলেন নিজের সাবেক ক্লাবের জালে।
এর ঠিক আট মিনিট পর গল্পের দ্বিতীয় অধ্যায়। এবার নিজেই গোলদাতা দুয়ে। ডেম্বেলের সঙ্গে বোঝাপড়ায় সাজানো আক্রমণটি শেষ হলো একটি ঠাণ্ডা মাথার শটে। বল ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বিপদজনকভাবে বাঁক নিয়ে ঢুকে পড়ল জালে। ইন্টার তখন যেন হাওয়ার ঘূর্ণিতে দিশেহারা।
পুরো ম্যাচে ইন্টার মিলান যেন ছিল ছায়া হয়ে বেঁচে থাকা এক সময়ের রাজা। বল দখল, মার্কিং, রক্ষণ—সব জায়গাতেই তারা ছিল নড়বড়ে।
বিরতির পরও ছন্দ পাল্টায়নি। ৬৩ মিনিটে ডেম্বেলের ব্যাকহিল পাসে ভিতিনহার শিল্পসুষমা মেশানো অ্যাসিস্টে আসে তৃতীয় গোল। গোলরক্ষক সোমার চেষ্টা করেও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি নিয়তির সামনে।
৭৩ মিনিটে আবারও দেখা মেলে কাভারাত্সখেলিয়ার ঝলক। ডেম্বেলের পাস থেকে সহজ অথচ মারকাটারি এক ফিনিশ; যেন শিল্প ও নিখুঁত ব্যবচ্ছেদের একসাথে উদযাপন।
শেষ বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তেও থেমে থাকেনি পিএসজি। ৮৬ মিনিটে সেনি মায়ুলা পায় সুযোগ। বারকোলার নিখুঁত পাসে ইতিহাসের শেষ ছোঁয়াটা লাগিয়ে দিলেন তিনিও। তাতে ৫-০ ব্যবধানে নিশ্চিত হয় পিএসজির জয়। যা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে সবচেয়ে বড় জয়। এ যেন শুধু স্কোরলাইন নয়, ফুটবল নিয়তির প্রতিচ্ছবি।
এই জয় শুধু একটি ট্রফির নয়, এটি ৫৫ বছরের অপেক্ষার চূড়ান্ত পুরস্কার। বহু হাহাকারের, ব্যর্থতা আর নতুন করে স্বপ্ন গড়ার গল্পের চূড়ান্ত পরিণতি। আর ইউরোপীয় ফুটবলের মানচিত্রে আজ একটি নাম চিরস্থায়ী হয়ে লেখা রইল সোনালি হরফে— প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন।
%e0%a7%ab%e0%a7%ab-%e0%a6%ac%e0%a6%9b%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%aa%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%ac%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%aa
Leave a Reply