১.৫ মিলিয়ন টন আম নিতে চায় চীন: চীনা রাষ্ট্রদূত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কেন্দুয়া ঘাসুড়া এলাকার রপ্তানিযোগ্য আমবাগান পরিদর্শন করতে গিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, চীন বাংলাদেশের আম আমদানিতে গভীর আগ্রহী। এরই মধ্যে দুদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং চীনের ‘জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস অব চায়না’ বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির জন্য আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন দিয়েছে।

রাষ্ট্রদূত জানান, চীনের আমদানিকারকরা বর্তমানে আমের হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট, প্যাকেজিং এবং অন্যান্য মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া যাচাই করছেন। সবকিছু সন্তোষজনক হলে মে মাসের মাঝামাঝি থেকেই বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ আম রপ্তানি শুরু হতে পারে।

চীন কমপক্ষে ১৫ লাখ টন আম বাংলাদেশ থেকে আমদানিতে আগ্রহী বলে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন এবং জানান, চীনের বাজারে বাংলাদেশি আমের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আম চাষে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম, যা রপ্তানিতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা এনে দেবে। একই সঙ্গে চীন বাংলাদেশে আম সংরক্ষণ ও হিমাগার নির্মাণে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

রাষ্ট্রদূতের সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন একাধিক আমদানিকারক, যারা সরাসরি বাগান পরিদর্শন করেন এবং রপ্তানির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন।

বাগান মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইতালি, ফ্রান্সসহ অন্তত ৩৮টি দেশে বাংলাদেশের আম রপ্তানি হয়ে আসছে, যার সিংহভাগ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। তবে এই প্রথমবার চীনের বাজারে প্রবেশের সম্ভাবনা তৈরি হলো। চীনে রপ্তানির ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ মাত্র ৮০-৯০ টাকা কেজি, যেখানে পশ্চিমা দেশগুলোতে তা প্রায় ৫০০ টাকার কাছাকাছি।

অপর চাষি মানিক বলেন, “চীনের সরাসরি আগ্রহ আমাদের মতো চাষিদের জন্য বড় সুযোগ। কোনো তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই বাগান থেকে সরাসরি রপ্তানি করতে পারলে আমরা ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতভাবে পাব।”

রাষ্ট্রদূতের সফরকালে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী, উপজেলা কৃষি অফিসার সলেহ্ আকরাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নীলুফা সরকার, থানার ওসি মনিরুল ইসলামসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

কৃষি বিভাগ জানায়, আম রপ্তানিতে সম্ভাব্য বাধা ও জটিলতা দূর করতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উত্তম কৃষি চর্চা (GAP) অনুসরণ করে নিরাপদ আম উৎপাদনের উদ্যোগ এবং চাষিদের প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে, যার লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন। সারা দেশে প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ২৭ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে কমপক্ষে ৫ হাজার মেট্রিক টন।

চীনের রাষ্ট্রদূতের সফর এবং আগ্রহ বাংলাদেশে আম রপ্তানির জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এটি শুধু কৃষি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে না, বরং স্থানীয় চাষিদের জীবনমান উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।


%e0%a7%a7-%e0%a7%ab-%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8-%e0%a6%9f%e0%a6%a8-%e0%a6%86%e0%a6%ae-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%9a%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc