হামাসকে উৎসাহিত করছে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডা: অভিযোগ নেতানিয়াহুর

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডার নেতাদের বিরুদ্ধে হামাসকে ‘উৎসাহিত’ করার অভিযোগ এনেছেন। গাজায় চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে বিরতি না এলে এসব দেশ ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সারের অনুরূপ মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে নেতানিয়াহু বলেন, আপনারা মানবতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ইতিহাসের ভুল পাশে দাঁড়িয়েছেন।

বিশ্বজুড়ে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও দুর্ভিক্ষের চিত্র ছড়িয়ে পড়ায় জনমত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রবলভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এতে চাপ বাড়ছে তেল আবিবের ওপর।

সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক ইয়াকি দায়ান বলেন, বিশ্বের কিছু মানুষ, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের বামপন্থি ও ইউরোপের কিছু অংশে ইসরায়েলের এই লড়াইকে আত্মরক্ষামূলক হিসেবে দেখছেন না। এই ফারাকটা ঘোচানো প্রায় অসম্ভব।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আরও উদ্বিগ্ন ইউরোপের কিছু দেশের—যেমন স্পেন ও আয়ারল্যান্ড—ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপে। ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশও এই পথে হাঁটলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে মনে করছে তেল আবিব।

নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। ওয়াশিংটনে আমাদের দূতাবাসে দুজন কর্মী হত্যার ঘটনাই তার প্রমাণ। হামলাকারী ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ বলে চিৎকার করেছিল, যেটা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময়ও শোনা গিয়েছিল।

এক্স-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, হামাস ফিলিস্তিন রাষ্ট্র চায় না, তারা ইহুদি রাষ্ট্র ধ্বংস করতে চায়। তবু ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডার নেতারা কেন এটা বোঝেন না—তা আমার বোধগম্য নয়।

নেতানিয়াহুর দাবি, পশ্চিমা দেশগুলোর পদক্ষেপ হামাসকে ‘চূড়ান্ত পুরস্কার’ দেওয়ার শামিল। বরং শান্তি অগ্রসর করার বদলে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও কানাডার মার্ক কারনির বিবৃতি হামাসকে আরও উসকে দিচ্ছে।

এই তিন নেতা সোমবার এক বিবৃতিতে গাজায় নতুন ইসরায়েলি অভিযানের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে মানবিক সহায়তায় বাধা না দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে তারা যুদ্ধ অবসানের সরাসরি আহ্বান জানাননি।

নেতানিয়াহুর অভিযোগ, তাদের হুঁশিয়ারিতে হামাসের বিরুদ্ধে নয়, বরং ইসরায়েলের বিরুদ্ধেই নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত ছিল। এতে হামাসের ক্ষমতায় থাকার পথ সুগম হয়। আবারও ইসরায়েল ধ্বংসের পরিকল্পনা করার সুযোগ পায়।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল বারো বলেন, ফ্রান্স হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি ‘অটল’। তিনি বলেন, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে থাকা মানেই হামাসকে উৎসাহ দেওয়া বা ইহুদিবিদ্বেষ নয়। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী লুক পোলার্ড টাইমস রেডিওকে বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে আছি। তবে সেই লড়াই আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। একই সঙ্গে আমরা চাই গাজায় সাহায্য পৌঁছাক।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় বড় পরিসরের সামরিক অভিযান শুরু করে। এতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। ইউরোপ ও আমেরিকায় ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যেই এ ধরনের কূটনৈতিক চাপ বাড়ছে।


%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%89%e0%a7%8e%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a6%9b%e0%a7%87-%e0%a6%ab%e0%a7%8d%e0%a6%b0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *