হাঁস-মুরগীর বাচ্চা উৎপাদনের মাত্রাতিরিক্ত ওঠা-নামা বড় চ্যালেঞ্জ

হাঁস-মুরগীর বাচ্চা উৎপাদনে মাত্রাতিরিক্ত ওঠানামা বাংলাদেশের পোল্ট্রি খাতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাজারে হাঁস-মুরগীর চাহিদা বেড়ে গেলে বাচ্চা মুরগীর (ডে-ওলড চিকস) অতিরিক্ত উৎপাদন হয়, আবার চাহিদা কমে গেলে উৎপাদন কমে যায়, যা বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে।

বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘হ্যাচারি ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক এক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এই অভিমত তুলে ধরেন। পোল্ট্রিটেকবাংলাদেশ প্রকল্পের অংশ হিসেবে গত ১৬ থেকে ১৮ জুন তিন দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় ল্যারিভ ইন্টারন্যাশনাল, লাইটক্যাসল পার্টনার্স, অ্যাক্সন লিমিটেড, রয়্যাল পাস রিফর্ম প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আধুনিক ও মানসম্মত হ্যাচারি গড়ে তুলতে হ্যাচারির মালিক, কর্মী ও সংশ্লিষ্টদের করণীয় এবং সুপারিশমালা তুলে ধরতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বক্তারা আরো বলেন, অতিরিক্ত উৎপাদনের সময় হ্যাচারি ও খামার মালিকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন, আর কম উৎপাদনের সময় বাজারে হঠাৎ করে হাঁস-মুরগি ও ডিমের ঘাটতি দেখা যায়। এ ধরনের অসঙ্গতি দামের উপর প্রভাব ফেলছে এবং ছোট আকারের হ্যাচারিগুলোর টিকে থাকার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করছে।

প্রশিক্ষণ সেশনে আরো বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে- হ্যাচারিতে হাঁস-মুরগীর ডিম ফোটানোর ক্ষেত্রে সমস্যা, অপর্যাপ্ত সংরক্ষণ, পরিবহন সমস্যা, হ্যাচারির ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি, আধুনিক ইনকিউবেশন সরঞ্জামের অভাব, প্রতিকূল পরিবেশের প্রভাব, রোগের প্রাদুর্ভাব, উন্নত প্রযুক্তির স্বল্পতা, দক্ষ জনবলের ঘাটতি ও বাজারজাতকরণের সমস্যা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাজার চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন পরিকল্পনা এবং খামার ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব।

এতে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশস্থ ডাচ দূতাবাসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার ওসমান হারুনী, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সচিব মোস্তফা কামাল, অ্যাক্সন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল ইসলাম ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

‘পোল্ট্রিটেকবাংলাদেশ প্রকল্প’ বিষয়ক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন লাইটক্যাসল পার্টনার্সের বিজনেস এনালিস্ট নাজিবা আলী

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, হ্যাচারির মান নির্ভর করে উন্নত সরঞ্জামের ব্যবহার, ডিম ফোটানোর সঠিক পদ্ধতি, হাঁস-মুরগী উৎপাদনে উপযুক্ত পরিবেশ ও কর্মীদের দক্ষতার উপর।

এতে ডাচ দূতাবাসের প্রতিনিধি ও বাংলাদশের বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক পোল্ট্রি শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ডাচ কোম্পানি এবং বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রশিক্ষণের সেশন পরিচালনা করেন হ্যাচারি সমাধান বিষয়ক প্রতিষ্ঠান রয়্যাল পাস রিফর্মের সিনিয়র পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ মি. গার্ড ডি ল্যাঞ্জ এবং একই প্রতিষ্ঠানের ইনকিউবেশন বিশেষজ্ঞ লোটে হেবনিক।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ পোল্টি ইন্ড্রাস্টিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী দেশে আনুমানিক ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ হ্যাচারি রয়েছে। পোল্ট্রি খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৬ মিলিয়ন বা ৬০ লাখ মানুষ জড়িত। বিপুল কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রক্রিয়াজাত পোল্ট্রি পণ্যে চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে দৈনিক মুরগির মাংসের ব্যবহার ২০১৬ সালে জনপ্রতি ১৭.৩ গ্রাম থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ২৬.২ গ্রাম হয়েছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামারের বার্ষিক বৃদ্ধি প্রায় ১৫ শতাংশ। এই সম্প্রসারণের ফলে বছরে ২৩.৩৭ বিলিয়ন ডিম এবং ১.৪৬ মিলিয়ন টন হাঁস-মুরগির মাংস উৎপাদন হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের পোল্ট্রি খাত দেশের জিডিপিতে প্রায় ১.৬ শতাংশ অবদান রাখে। ২০৫০ সালের মধ্যে পোল্ট্রি পণ্যের চাহিদা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকায়, এই খাতের প্রবৃদ্ধির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পোল্ট্রি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে অবাকাঠামোগত উন্নয়নসহ হ্যাচারির ব্যবস্থাপনা ও মান উন্নয়ন এবং কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি।


%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%81%e0%a6%b8-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%97%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%9a%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a6%be-%e0%a6%89%e0%a7%8e%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *