চার দিনের মধ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ভয়াবহ হামলায় প্রাণহানি ২৫০-এর কাছাকাছি পৌঁছেছে। সোমবার সকালেও উভয়পক্ষ একে অপরের ওপর নতুন হামলা চালায়। ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আঘাত হানলে আটজন নিহত হন, আহত হন আরও বহু মানুষ। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েল হামলা চালায় তেহরানসহ ইরানের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তেহরানে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কুদস ফোর্সের একাধিক কমান্ড সেন্টারে হামলা চালানো হয়েছে। এসব সেন্টার থেকেই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের ‘প্রক্সি বাহিনীর মাধ্যমে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করা হতো’ বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে আইডিএফ।
ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত চার দিনে ইসরায়েলি হামলায় দেশটির অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন সেনা কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী ও সাধারণ বেসামরিক নাগরিক।
ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম আর্মি রেডিও জানিয়েছে, সোমবারের হামলায় মধ্য ইসরায়েল ও হাইফা শহরে মোট আটজন নিহত হন। এতে ইসরায়েলের মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ জনের বেশি এবং আহত হয়েছেন ৩০০ জনেরও বেশি।
ইরানের হামলায় তেলআবিবে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি শাখা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি। তিনি বলেন, আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে আমরা এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
শুক্রবার ইসরায়েল যখন ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় হামলা চালায়, তখন থেকেই এই সংঘাত শুরু। এরপর থেকেই একের পর এক পাল্টা হামলায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সোমবার পার্লামেন্টে ভাষণ দিয়ে বলেন, সব ধরনের মতবিরোধ ও সমস্যা ভুলে এখন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই গণহত্যাকারী আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে হবে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তেহরানের বাসিন্দারাই এর মাশুল দেবে। তেহরানের দাম্ভিক শাসক এখন কাপুরুষ খুনির ভূমিকা নিয়েছে।
ইসরায়েল সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, এই সংঘাতের ফলাফল হতে পারে ইরানে ‘শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন’। দেশটির মতে, দেশটির অভ্যন্তরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের পথ খুলে যেতে পারে।
তবে ইরানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরায়েল যতক্ষণ না হামলা বন্ধ করছে, ততক্ষণ আমাদের প্রতিশোধ চলবে।
আইআরজিসিও জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আরও কার্যকর, নির্ভুল ও ধ্বংসাত্মক হামলা চালানো হবে যতক্ষণ না সেগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার বলেছেন, আমি আশা করি তারা (ইসরায়েল-ইরান) একটা সমঝোতায় পৌঁছাবে, কিন্তু তার আগে হয়তো যুদ্ধ করতে হতে পারে।
একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলায় যুক্ত নয়। তবে ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে হামলা চালায়, তবে তারা সামরিক শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করবে।
ট্রাম্পের এসব মন্তব্য নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। ইরান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের হামলার সহায়ক শক্তি এবং তারা সিরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে মার্কিন ঘাঁটিকে নিশানা করতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, সহিংসতা থামার কোনও লক্ষণ এখনও নেই। বিশ্লেষক এলিয়াজ ম্যাগনিয়ার আল জাজিরাকে বলেন, এটা যুদ্ধের শুরু মাত্র। ইসরায়েলি সরকার ও সেনাবাহিনী নিজেরাই বলছে, সামনে আরও বড় আঘাত আসছে।
মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো অ্যালেক্স ভাতাঙ্কা বলেন, আমি মনে করি না ইরান দীর্ঘদিন যুদ্ধ চালানোর আত্মবিশ্বাস রাখে। তারা একা, কোনও মিত্র নেই। বিপরীতে, ইসরায়েলের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্যান্য বহু শক্তিধর দেশ। ইরানের জন্য বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগের।
সূত্র: আল জাজিরা
%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%97%e0%a6%97%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%87-%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%9b%e0%a7%87-%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%87%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b0
Leave a Reply