‘যুদ্ধ প্রস্তুতি’ ঘিরে তৎপর ভারত, যেভাবে চলবে মহড়া

জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বাজছে। এই আবহে ভারত যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলার মহড়ায় তৎপর হয়েছে। ১৯৭১ সালের পর প্রথম রাজ্যে রাজ্যে নিরাপত্তা মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। এই মহড়া শুরু হতে চলেছে বুধবার। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে আর কী করা যাবে না, সাধারণ নাগরিকদেরকে সেই সচেতনতার পাঠ দিতেই ভারতের রাজ্যে রাজ্যে এই অসামরিক মহড়া চালানো হবে।

ভারতের ২৭টি রাজ্য এবং ৮ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মোট ২৫৯টি ‘অসামরিক প্রতিরক্ষা জেলা’ বা ‘সিভিল ডিফেন্স ডিস্ট্রিক্ট’ রয়েছে। তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ৩১টি জায়গাও। কেন্দ্র সরকার রাজ্যগুলোকে মহড়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছে। তাতে মনে করা হচ্ছে ওই জেলাগুলোতেও মহড়া চলবে। ভারতীয় পত্রিকা এনডিটিভি জানায়, দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মতো বেশি-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোসহ ২৪৪ টি ডিফেন্স ডিস্ট্রিক্টে হবে মহড়া। এর সঙ্গে আরও আছে খুবই স্পর্শকাতর কয়েকটি এলাকা যেগুলোতে মহড়া চালানো হবে। যেমন: রাজধানী দিল্লির পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি, শোধনাগার, জলবিদ্যুৎ বাঁধ।


ভারতের সব রাজ্যকে পাঠানো নির্দেশে মূলত বিমান হামলা হলে কী করতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যগুলোকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, বিমান হামলার সময়কার সতর্কতামূলক সাইরেন ব্যবস্থা সক্রিয় আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে বুধবারের মহড়ায়। রাতে হামলার ক্ষেত্রে যুদ্ধবিমানের খবর পাওয়া মাত্র যাতে হঠাৎ করে সব আলো নিভিয়ে দিয়ে ‘ক্র্যাশ ব্ল্যাকআউট’ করে শত্রু বিমানবাহিনীকে বিভ্রান্ত করে দেওয়া যায়, তারও মহড়া সেরে রাখতে হবে।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে সম্ভাব্য হামলা থেকে যথাসম্ভব ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন, সেতু, তেলের ডিপো, রেলস্টেশন বা বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো আগে থেকেই ঢেকে দেওয়া বা সেগুলোকে যথাসম্ভব লুকানোর প্রস্তুতিও সেরে রাখাতে হবে রাজ্যগুলোকে। তাছাড়া, সিভিল ডিফেন্স বা অসামরিক প্রতিরক্ষা প্রোটোকল সম্পর্কে নাগরিক ও শিক্ষার্থীদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, হামলার সময় বা জরুরি অবস্থায় নাগরিকদের মধ্যে সমন্বয় রেখে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার প্রশ্নে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে তা অভ্যাস করিয়ে রাখতে হবে মহড়ায়।

এজন্য জেলাশাসক, বেসামরিক প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবক, হোমগার্ডদের সঙ্গে স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এনডিটিভি’র খবরে বলা হয়েছে কিছু কিছু জেলায় এরই মধ্যেই মহড়া শুরু হয়ে গেছে। পুলিশ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কিংবা ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেজপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) এর সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে এই মহড়া চলছে।

বার্তা সংস্থা এএনআই এর শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, জম্মুর স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিমান হামলার সাইরেন শুনে তাদের শ্রেণীকক্ষের ডেস্কের নিচে আশ্রয় নিচ্ছে এবং তাদেরকে অন্যান্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, উত্তর প্রদেশে পুলিশ এবং স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা আগুনের মহড়ায় অংশ নিয়েছেন। তারা বড় একটি লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে ছোট্ট একটি বক্সে লাগা আগুন নেভাচ্ছেন এবং আহতদের পিঠে করে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন।

লাক্ষ্নৌতে বুধবারের মহড়ার প্রস্তুতিতে বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হয়েছে এবং মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যাওয়ার সময় যাতে কেউ পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা না ঘটে সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উত্তর প্রদেশে ১৯ টি স্থানকে উচ্চ-ঝুঁকির স্থান হিসাবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। দিল্লি পুলিশকেও কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে হামলার সময় কি জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে সে বিষয়ে ব্রিফিং দেওয়া হয়েছে।

রাজস্থান এবং পাঞ্জাবের মতো পাকিস্তানের সীমান্তঘেঁষা রাজ্যগুলো নিয়েও উদ্বেগ বিরাজ করছে। জঙ্গিরা যাতে সীমান্ত এলাকাগুলোতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য এসব জায়গায় পুলিশ ও সীমান্ত কর্মকর্তাদেরকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।

পাঞ্জাবের ২০ টি জেলায় চলবে নিরাপত্তা মহড়া। তাছাড়া, উড়িষ্যার ১২ টি স্থানেও মহড়া চলবে। কর্নাটকের তিনটি স্থানে, গুজরাটের ১৫ টি স্থানে এবং মহারাষ্ট্রের ১৬ টি স্থানে বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেনের মহড়া চলবে। মনিপুরেও এরই মধ্যে মহড়ার প্রস্তুতি নিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল /এমএইচ


%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%98%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%a4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *