মহান মে দিবস আজ

শ্রম-শোষণের বিশ্ব ইতিহাসের ধারাবাহিকতা ছেদ করে এক দিন বদলের বাস্তবতা এনেছিল মে দিবস। মে দিবসের ধাক্কা বিশ্বের শ্রমিকদের সংহতি যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি তাদের ওপর শোষণের বিরুদ্ধেও প্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে। মে দিবসের পথ ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের অধিকার, বিশেষ করে ন্যূনতম মজুরি, কাজের পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা—এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। কিন্তু বিশ্বায়নের ফলে অর্থনৈতিক গতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে বৈষম্য ও বঞ্চনা।

বাংলাদেশের শ্রমিকদের, বিশেষ করে পোশাকশিল্প, জাহাজশিল্প, ইমারত নির্মাণ শিল্পসহ অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে কর্মরত লাখো শ্রমিক উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও অন্যান্য অধিকার পান না। মৌলিক চাহিদা পূরণ করে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন জাতীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা কিন্তু কাগজের সেই নিয়মের বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। কেবল শ্রম-বৈষম্য নয়, শিক্ষা থেকে শুরু করে চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য একপর্যায়ে ককটেলের মতোই বিস্ফোরিত হয়েছে! যে আন্দোলনের ঢেউ ছাত্র জনতাকে এক কাতারে শামিল করেছে রাজপথে। জীবন উৎসর্গ করেছে তরুণরা।

এমন বাস্তবতায় বঞ্চনা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জিত নতুন প্রেক্ষাপটে নতুন বাংলাদেশে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’ প্রতিপাদ্যে পালন করা হবে এবারের মহান মে দিবস। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিন আজ।

১৩৯ বছর আগে ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকেরা কাজের সময়সীমা আট ঘণ্টা নির্ধারণ, কাজের উন্নত পরিবেশ, মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করেন। দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সেদিন পথে নেমে এসেছিলেন।


অত্যন্ত বর্বর কায়দায় দমন করা হয়েছিল সেই শ্রমিক বিক্ষোভ। পুলিশের গুলিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন শ্রমিকেরা। সারা বিশ্ব সোচ্চার হয়ে উঠেছিল সেই ঘটনায়। শিকাগোর শ্রমিকদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টা করার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর পর থেকে দিনটি মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা এক বাণীতে বলেছেন, বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘মহান মে দিবস-২০২৫’ পালন করা হচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রম, ন্যায্য মজুরি ও শ্রমের মর্যাদা আদায়ের লক্ষ্যে ১৮৮৬ সালের ১ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের ‘হে’ মার্কেটে শ্রমিকদের রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শ্রমিক ও শ্রমের মর্যাদা সম্মানের সঙ্গে বিশ্বময় স্বীকৃতি লাভ করে। এ দিবসে আদায় হয়েছে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার। সে প্রেক্ষাপটে এটি শুধু একটি সাধারণ দিবস নয়, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস।

বাসস জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শ্রম অধিকার রক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়নে শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে। গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন শ্রম বিষয়ে অংশীজন ও বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করে।


কর্মসূচি: মহান মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সমাবেশ, লাল পতাকা মিছিল, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ ৯ দফা দাবিতে সকাল ১০টায় তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজার সামনে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা, গণমুক্তি ইউনিয়ন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশের সোশালিস্ট পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, শহীদ বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিক স্মৃতি সংসদ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মে দিবসের সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করেছে, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) সকাল সাড়ে ৯টায় শ্রমিক সমাবেশ, আলোচনাসভা ও র্যালি করবে।

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সত্যেন সেন চত্বরে বেলা ১১টায় সাংস্কৃতিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ বিকাল ৫টায় শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।


বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ


%e0%a6%ae%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%ae%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%b8-%e0%a6%86%e0%a6%9c

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *