ভারতের লবণ সত্যাগ্রহ সম্পর্কে কতটা জানেন?

ডেভিড থরো-এর ‘essy on civil Disobedience (1849)’ গ্রন্থ থেকে মহাত্মা গান্ধী সত্যাগ্রহের ধারণা গ্রহণ করেছিলেন। এ ছাড়াও ধারণাটি বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ কুরআন, গীতা এবং বাইবেল দ্বারা প্রভাবিত। সত্য, অহিংসা ও আত্মনিগ্রহ এই তিনটি মৌল উপাদানের ওপর মহাত্মা গান্ধীর সত্যগ্রহের ভাবনা প্রতিষ্ঠিত। এই ভাবনা দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল লবণ সত্যাগ্রহ।

বলা নেওয়া দরকার, সত্যাগ্রহরে প্রথম উপাদানটিই হলো সত্য। মহাত্মা গান্ধী মনে করতেন, সত্য ন্যায়সঙ্গত ও নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। একজন সত্যাগ্রহীর প্রথম শর্ত হলো তাকে সত্যবাদী এবং ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। দ্বিতীয় উপাদান ছিল অহিংসা। মহাত্মা মনে করতেন, হিংসাত্মক কোনো আন্দোলন নয় ভালোবেসে শত্রুর হৃদয় পরিবর্তন করতে হবে। 

লর্ড বাক্রেনহেড

এই নীতিতে পারস্পারিক আলাপ-আলোচনা, আবেদন-নিবেদন ও প্রয়োজনবোধে চরমপত্র প্রদান। অর্থনৈতিক বয়কট, বিক্ষোভ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সক্রিয় প্রচারমূলক সভা-সমিতি, মিছিল প্রভৃতির আয়োজন করা। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে দিত্বীয় আন্দোলন ছিল লবণ সত্যাগ্রহ। অসহযোগ আন্দোলনের হঠাৎ সমাপ্তি জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছিল। এক দশকে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছিল। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে পূর্ণ স্বরাজের প্রস্তাব পাশ হয়। ২৬ জানুয়ারি প্রতীকী স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। এর ফলে জন মানুষের মনে বিপুল উদ্দিপনার সঞ্চার হয়। মহাত্মা গান্ধী ১৯৩০ সালে লবণ গণ আন্দোলনের ডাক দেন।

‘সাইমন কমিশন’ বিরোধী বিক্ষোভের সময় ধর্মঘট, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়। ভারতীয়রা কমিশনে কোনো রকম সহযোগিতা করেনি। তাই ইংরেজ সংসার কি ধরণের সংস্কার করবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। ভারত সচিব লর্ড বাক্রেনহেডের বিদ্রুপের জবাবে ভারতীয়রা সর্বদলীয় সম্মেলন করে। 

নেহেরু রিপোর্টের খসড়া সংবিধান পেশ করা হয়। কিন্তু জিন্নাহর সংশোধনী প্রস্তাব বাতিল হলে জিন্নাহ সম্মেলন ত্যাগ করেন। ফলে সর্বদলীয় সম্মেলন ব্যর্থ হয়। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৫ সালে। ১৯২১ মজদুর ও কৃষক শাখা ও ছাত্র শাখা গড়ে তোলে। রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে। 

 

১৮৮২ সালে লবণ আইন তৈরির মধ্য দিয়ে লবণের ওপর কর চাপিয়ে আমদানিকৃত লবণ অধিক মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা হলো। 

সৌমেন রায়ের ‘‘আর্কিমিডিস ও লবণ সত্যাগ্রহ’ প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, ভারত থেকে জামা কাপড় তৈরির জন্য তুলা যেত ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। যতসংখ্যক জাহাজ তুলা নিয়ে যেত তার থেকে কম সংখ্যক জাহাজ লাগতো তৈরি করা জামা কাপড় বা অন্যান্য দ্রব্য নিয়ে আসতে। এর ফলে কিছু খালি জাহাজ আসতে হতো। এই জাহাজগুলোর ‘ভর কেন্দ্র’ নিচে নামানোর জন্য জাহাজের খোলে তুলে দেওয়া হতো লবণের বস্তা। সেই লবণের বস্তা ফেলে না দিয়ে বিক্রি করার ব্যবস্থা করেছিল ব্রিটিশরা। মনোপলি কায়েম করেছিল ব্যবসার ওপর।  বাড়তি ট্যাক্স বসিয়েছিল এই আমদানিকৃত লবণ বিক্রির জন্য।’’

১৯২৯ সালে অর্থনীতির জগতে মহামন্দা দেখা দেয়। এর প্রভাব ভারতের অর্থনীতিতেও পড়ে। নিত্য ব্যবহার্য পণ্য লবণের ওপরেও সরকার কর বসায়। লবণের ব্যবসা ইংরেজদের একচেটিয়া হয়ে ওঠে। মহাত্মা গান্ধী এগারো দফা দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তা অগ্রাহ্য করে। এরপর মহাত্মা গান্ধী ১৯৩০ সালের ১২ মার্চ ডান্ডি পদযাত্রা করেন। ডান্ডির সমুদ্র উপকূলে তিনি লবণ আইন ভঙ্গ করলে দেশব্যাপী আইন অমান্য শুরু হয়। যা লবণ সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।

তথ্যসূত্র: এডুকেয়ার গাইডেন্স, বাংলাপিডিয়া 


%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b2%e0%a6%ac%e0%a6%a3-%e0%a6%b8%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%b9-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a7%8d

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *