বৃষ্টিভেজা নাটকে ভুটানকে হারাল বাংলাদেশ

ঢাকার আকাশে সকাল থেকেই টানা বর্ষণ। সেই বৃষ্টির মধ্যেই এক ব্যতিক্রমী নাটক উপহার দিলো মেয়েদের অনূর্ধ্ব-২০ সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি গড়ায় পাশের অনুশীলন মাঠে। আর এই ‘দুই মাঠের এক ম্যাচ’-এ শান্তি মারডির দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে ভুটানকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ।

বিকেল ৩টায় যখন ম্যাচ শুরু হয়, তখন মাঠ ছিল পুরোপুরি কাদায় পরিপূর্ণ। খেলোয়াড়দের স্পাইক আটকে যাচ্ছিল, বল গড়িয়ে না গিয়ে থমকে যাচ্ছিল পানিতে। একাধিকবার পড়ে যাচ্ছিলেন ফুটবলাররা। এমনকি গোলরক্ষকেরও ছিল রীতিমতো সংগ্রাম। প্রথমার্ধে খেলাটাই যেন হয়ে উঠেছিল একটা ‘সার্কাস’। খেলা নয়, ছিল কেবল বলের পেছনে দৌড়ানো।

এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বিরতির পর খেলা বন্ধ রাখা হয় তিন ঘণ্টা। তিনবার মাঠ পরিদর্শন করেন ম্যাচ কমিশনার, দুই দলের প্রতিনিধিরাও ছিলেন তাতে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ম্যাচ স্থানান্তরের। সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হয় অনুশীলন মাঠে।

অনুশীলন মাঠে দর্শকদের জন্য ছিল না কোনো গ্যালারি। তারা দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছেন ম্যাচ, কিন্তু মিডিয়া পাস থাকা সাংবাদিকরাও পাননি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। এমন ‘আধা-গোপনীয়’ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় কেবল স্কোরবোর্ডে নয়, মনেও ছাপ ফেলে।

ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই গোল তুলে নেন শান্তি মারডি। বৃষ্টিজনিত বাধা পেরিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে এসে আরও দু’টি গোল করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তিনি। ৬০ ও ৭৯ মিনিটে নিজের বাকি দুই গোলটি করেন। এক গোল আসে মুনকি আক্তারের পা থেকে। ৭৬ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে একক প্রচেষ্টায় জালে বল পাঠান তিনি।

ভুটান একমাত্র সান্ত্বনার গোলটি করে ম্যাচের ৫৩ মিনিটে। গোলদাতা সানগাই ওয়াংমো সাময়িকভাবে ম্যাচে সমতা আনলেও তা ধরে রাখতে পারেনি তার দল।

বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার এ ম্যাচে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথ বেছে নেন। নেপালের বিপক্ষে খেলা দলের বেশিরভাগকেই বিশ্রামে রেখে মাঠে নামান নতুনদের। অধিনায়ক ছিলেন সুরমা জান্নাত। গোলবারে দেখা যায় মিলি আক্তারকে। মাঠের বাইরে ছিলেন নিয়মিত মুখরা—সাগরিকা (লাল কার্ডে নিষেধাজ্ঞায়), নবিরন, রিতা, স্বপ্না, পূজা ও সিনহা শিখা।

এই জয়ে টানা তিন ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা অনেকটাই এগিয়ে গেল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে। প্রতিযোগিতায় এটি তৃতীয় হ্যাটট্রিক। সাগরিকা ও নেপালের পূর্ণিমা রায়ের পর শান্তি মারডির নামও যোগ হলো এই তালিকায়।

এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতির ভেতরেও মেয়েদের দৃঢ়তা আর খেলার প্রতি ভালোবাসা যেন বারবার বলে দেয়; বাংলাদেশ নারী ফুটবল এগিয়ে চলেছে, কাদা-মাটি পেরিয়ে ভবিষ্যতের দিকে।


%e0%a6%ac%e0%a7%83%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a7%87%e0%a6%9c%e0%a6%be-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%9f%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%ad%e0%a7%81%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%95%e0%a7%87

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *