যুক্তরাষ্ট্রের এক বাণিজ্য আদালত বিশ্বজুড়ে চাপিয়ে দেওয়া ডনাল্ড ট্রাম্পের বেশিরভাগ শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করার পরদিন আপিল আদালত ওই রায়ে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়ে বলেছে, প্রেসিডেন্ট আপাতত তার আরোপ করা আমদানি শুল্ক সংগ্রহ করতে পারবেন।
বুধবারের রায়ে ম্যানহাটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক আদালত বলেছিল, শুল্ক আরোপ করতে গিয়ে ট্রাম্প তাকে দেওয়া ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আদালতে যায়; বৃহস্পতিবার তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসির কোর্ট অব আপিলস ফর দ্য ফেডারেল সার্কিট ট্রাম্পের শুল্ক আপাতত পুনর্বহাল করেছে, বলেছে বিবিসি।
বুধবারের বাণিজ্য আদালতের রায় ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চোখ কপালে তুলে দিয়েছিল। তারা একে ‘আদালতের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া’ হিসেবেই দেখছে।
৫টি ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ১৩টি রাজ্য ট্রাম্পের শুল্ককে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ম্যানহাটনের আদালতে গিয়েছিল, ওই মামলাতেই প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় আসে।
এর বিরুদ্ধে আপিল করে ট্রাম্প প্রশাসন বলে, বাণিজ্য আদালতের রায়টি প্রেসিডেন্টের কর্তৃত্বে অনধিকার হস্তক্ষেপ এবং এটি মাসের পর মাস ধরে চলা জটিল বাণিজ্য আলোচনা ভেস্তে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে।
“আদালতের নয়, পররাষ্ট্র নীতি ও অর্থনৈতিক নীতি ঠিক করার দায়িত্ব রাজনৈতিক শাখার,” আবেদনে বলেছে তারা।
এ নিয়ে আপিল আদালতের সিদ্ধান্ত আসার আগেই এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, “আমেরিকা চলতে পারে না, যদি ট্রাম্প বা অন্য যে কোনো প্রেসিডেন্টের সংবেদনশীল কূটনৈতিক বা বাণিজ্য আলোচনা অ্যাক্টিভিস্ট বিচারকরাই ঠিক করে দেন।”
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্পও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের রায়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
“আশা করি, সুপ্রিম কোর্ট এই ভয়াবহ, দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ সিদ্ধান্তটি দ্রুত বাতিল করে দেবে,” বলেছেন তিনি।
নিউ ইয়র্কের স্বল্প পরিচিত বাণিজ্য আদালতের বুধবারের রায় কার্যকর হলে তা ‘ফেন্টানিল পাচার ঠেকাতে’ ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তা বাতিল হয়ে যেত। একইসঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন গত মাসে বিশ্বের সব দেশের আমদানি পণ্যে আরোপিত ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনসহ অন্যদের ওপর দেওয়া অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্কও আর সংগ্রহ করতে পারতো না।
এসব শুল্ক আরোপে ট্রাম্প ১৯৭৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার অ্যাক্ট (আইইইপিএ) ব্যবহার করেছিলেন। বাণিজ্য আদালত তার রায়ে বলেছিল, আইইইপিএ আইনে জরুরি ক্ষমতার অধীনে প্রেসিডেন্ট যে এখতিয়ার পেয়েছেন, তা মার্কিন সংবিধান বাণিজ্য সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কংগ্রেসকে যে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে তাকে ছাপিয়ে যেতে পারে না।
বাণিজ্য আদালত অবশ্য গাড়ি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ট্রাম্পের শুল্কের ব্যাপারে কিছু বলেনি। এসব শুল্কের ক্ষেত্রে ট্রাম্প অন্য এক আইন ব্যবহার করেছিলেন।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চলায় হোয়াইট হাউজ এসব শুল্কের বেশিরভাগই সাময়িকভাবে স্থগিতও রেখেছে।
আপিল আদালত বলেছে, মামলা চলাকালে ট্রাম্প প্রশাসন তার মতো করেই শুল্ক নিতে পারবে। এ নিয়ে ৫ জুন পরবর্তী শুনানি হবে।
বৃহস্পতিবার আরেকটি ফেডারেল আদালত শুল্ক নিয়ে পৃথক এক মামলায় বাণিজ্য আদালতের মতোই রায় দিয়েছে।
বিচারক রুডলফ কন্ট্রেরাসও শুল্ক আরোপে ট্রাম্প তার ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে মত দিয়েছেন, তবে এই রায় কেবল একটি খেলনা কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
এদিকে ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, “আপনারা ধরে নিতে পারেন, আমরা যদি আদালতে হেরেও যাই, তাও আমরা অন্য কোনো পথে এই শুল্ক কার্যকর করবো।”
কোনো আদালতই এখন পর্যন্ত গাড়ি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে ট্রাম্পের শুল্কে বাগড়া দেয়নি। ১৯৬২ সালের বাণিজ্য সম্প্রসারণ আইনের ২৩২ ধারায় জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগকে উদ্ধৃত করে ট্রাম্প এই শুল্ক দিয়েছিলেন।
এই আইন ব্যবহার করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেমিকন্ডাক্টর বা কাঠের মতো খাতগুলোতে শুল্ক বসাতে পারেন। ট্রাম্প চাইলে শুল্ক দিতে ১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের ৩০১ নং ধারাও প্রয়োগ করতে পারেন, যেমনটা প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর শুল্ক দিতে গিয়ে তিনি করেছিলেন।
১৯৩০ সালের পৃথক এক আইনও ট্রাম্পকে আমদানি পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের সুযোগ দিয়ে রেখেছে। যদিও কয়েক দশক কোনো প্রেসিডেন্টই আইনটি ব্যবহার করেননি।
আপাতত হোয়াইট হাউজের লক্ষ্য হচ্ছে আদালত থেকেই জয়ী হয়ে বেরিয়ে আসা।
বাণিজ্য আদালতের রায় আপিল আদালতে গিয়ে থমকালেও এই মামলার পরিণতি শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টেই ঠিক হবে বলে ধারণা করা যায়।
বাংলাদেশ জার্নাল/এজেএইচ
%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b6%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%95-%e0%a6%86%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a6%a4-%e0%a6%ac%e0%a6%b9
Leave a Reply