কিছু মার্কিন পণ্যে শুল্ক ছাড় চীনের, আলোচনা নিয়ে ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান

বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তাপ কিছুটা প্রশমিত হতে পারে—এমন ইঙ্গিত দিয়েছে চীন। শুক্রবার দেশটি জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কিছু ওষুধকে উচ্চ শুল্ক থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তবে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার নতুন ধারা শুরু হয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি একেবারেই অস্বীকার করেছে বেইজিং। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

বাণিজ্য সংস্থাগুলোর মতে, চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত কয়েকটি ওষুধকে ১২৫ শতাংশ শুল্কের বাইরে রেখেছে। এই শুল্ক আগে চলতি মাসে ট্রাম্প প্রশাসনের ১৪৫ শতাংশ শুল্কের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আরোপ করা হয়েছিল।

একটি পণ্যের তালিকার কথা জানা যাচ্ছে। যেখানে ভ্যাকসিন, রাসায়নিক ও জেট ইঞ্জিনসহ মোট ১৩১টি পণ্য রয়েছে। যদিও তালিকাটি নির্ভরযোগ্যভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স এবং চীন সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

এদিকে ট্রাম্প সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনকে জানিয়েছেন, তার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ফোনালাপ হয়েছে এবং উভয় দেশের মধ্যে আলোচনাও চলছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি না এটা তার (শি) দুর্বলতার ইঙ্গিত।

তবে এই দাবি একেবারে খারিজ করে দিয়েছে ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাস। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক নিয়ে কোনও আলোচনা বা পরামর্শ চলছে না। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বিভ্রান্তি তৈরি বন্ধ করা।

এছাড়া চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশকে লক্ষ্য করে ট্রাম্প যে ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছেন সেগুলোর কার্যকারিতা আগামী ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। ফলে অনেক দেশ এখন দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাদা বাণিজ্যচুক্তির চেষ্টা চালাচ্ছে, যদিও সাধারণত এসব চুক্তি করতে বছরের পর বছর লেগে যায়।

হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের ট্রাম্প জানান, জাপানের সঙ্গে তিনি চুক্তির একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ভবিষ্যতের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলোর জন্য একটি ‘পরীক্ষামূলক ক্ষেত্র’ হতে পারে।

টাইমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি ইতোমধ্যে ২০০টি চুক্তি করেছেন, যেগুলো তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। তবে কোন কোন চুক্তি সে বিষয়ে কিছু জানাননি। তিনি বলেন, যদি এক বছর পরেও ২০ থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকে, তাহলে আমি এটাকে সম্পূর্ণ বিজয় হিসেবে বিবেচনা করব।

ট্রাম্পের মতে, এই শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করবে। তবে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এতে পণ্যের দাম বাড়বে এবং মন্দার ঝুঁকি তৈরি হবে।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ১০ শতাংশের মতো পতন হয়েছে, যেখানে বিশ্বের অন্যান্য বাজার তুলনামূলক ভালো অবস্থানে। ইউরোপ ও এশিয়ার শেয়ারবাজারে গত দুই সপ্তাহে বৃদ্ধি দেখা গেছে এবং ডলার মাসখানেক পর প্রথমবারের মতো শক্তিশালী হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতিতে সব আমদানির ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক এবং লোহা, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টরের ওপরও নতুন খাতভিত্তিক শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম ১২.৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে।

এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে ব্যাপক আলোচনা হয়। সেখানে অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের সঙ্গে একান্ত বৈঠকের চেষ্টা করেছে।

বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বৈঠককে বেসেন্ট ‘খুবই সফল’ বলে মন্তব্য করেন। সিউলও একে ‘ভালো সূচনা’ বলেছে। সুইজারল্যান্ডও তাদের প্রাথমিক বৈঠক নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।

তবে আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সতর্কবার্তা সত্ত্বেও, অধিকাংশ দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় বাস্তব কোনও অগ্রগতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, এই শুল্কনীতি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির মারাত্মক ধীরগতির কারণ হতে পারে।


%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%9b%e0%a7%81-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a6%aa%e0%a6%a3%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87-%e0%a6%b6%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%95

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *