কয়েকজন উপদেষ্টা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চান: সালাহউদ্দিন আহমদ

সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ‘চক্রান্ত করে দেশে অস্থিরতা এবং অস্থিতিশীলতা’ সৃষ্টি করতে চান বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, “অনির্বাচিতভাবে যতদিন খুশি অনির্দ্দিষ্টকাল ক্ষমতা ভোগ করার জন্য কেউ কেউ স্বপ্ন দেখছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি, আপনি যত শিগগির সম্ভব বাংলাদেশের জাতীয় সম্মান রক্ষা হবে, দেশের মানুষ আশ্বস্থ হবে এমন ব্যবস্থা নেন। দেশের মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের চাকা ঘুরবে, বিনিয়োগের পরিবশে সৃষ্টি হবে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে আমরা বাংলাদেশের মানুষ সেটাই চাই।”

প্রধান উপদেষ্টার মনযোগ আকর্ষণ করে বিএনপি নেতা বলেন, “আপনার কয়েকজন উপদেষ্টা বিভিন্ন রকমের চক্রান্ত করে দেশে অস্থিরতা এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চান। তাদের সর্ম্পকে আপনাকে আমরা জানিয়েছি। আপনি সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেন। যাতে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা পায়। যাতে কোনো রকম অস্থিতিশীল পরিস্থতি সৃষ্টি না হয়, রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি না হয়।”

সোমবার বিকালে সিলেট নগরীর শিল্পকলা একাডেমী অডিটরিয়ামে সিলেট বিভাগে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আপনি সবার সম্মানিত ব্যক্তি। কথাগুলো খুব নরমভাবে বললাম, সেজন্য নরমভাবে নেবেন সেটা হবে না। বলছি নরমভাবে প্রধান উপদেষ্টা, হয়ত আপনার কানে যেতে পারে, নাও যেতে পারে। গেলে ভাল, আর যদি আপনি কানে না তুলেন, তাহলে সবার জন্য খারাপ।

“ভাবটা এখন এমন হয়েছে আপনাদের, সব উপদেষ্টারা মনে করছেন, বাংলাদেশ পুরোটা যেন তাদের কথায় উঠবে-বসবে। তাদের মন যা চায় তা সিদ্ধান্ত নেবে এবং আমাদের মেনে নিতে হবে। আপনারা অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক রাস্তায় হাঁটছেন। আপনারা কথা বলছেন গণতন্ত্রের বিপরীত ভাষায়। কাজ করছেন আইনের শাসনের বিরুদ্ধে।’’

সংস্কারের ফল পেতে হলে নির্বাচিত সংসদের বিকল্প আছে কি-না এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “আমরা সেই কথা বললে, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব নারাজ হয়। বর্তমান সভ্য বিশ্বে গণতান্ত্রিকভাবে শাসন ব্যবস্থার জন্য নির্বাচনের কি কোনো বিকল্প আছে? কেউ কেউ আছেন উপদেষ্টারা, তারা বলছেন, তারা নাকি জনগণ দ্বারা নির্বাচিত। গণঅভ্যুত্থান নাকি তাদেরকে নির্বাচিত করেছে! তারা যদি সেইভাবে নির্বাচিত হয়ে যায়; তো বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা আছে কেন? নির্বাচন কমিশনের কাজ কী? আমরা যারা ভোট দান করতে চাই; যার জন্য দীর্ঘ ১৭ বছর সংগ্রাম আর রক্ত দিলাম। তাহলে এগুলোর তো কোনো দরকার নাই?”

দলের সদস্যপদ সম্পর্কে বিএনপি নেতা বলেন, “যে মানুষ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দেবেন, তিনিই বিএনপির সদস্য হতে পারবেন। বিএনপির কি খরা পড়ে গেছে যে আওয়ামী লীগ থেকে সদস্য আমদানি করতে হবে? যে আওয়ামী লীগের ডিএনএ-তে গণতন্ত্র নাই, তাদেরকে কেন আহ্বান করতে হবে বিএনপির সদস্য হওয়ার জন্য? ৫ অগাস্ট বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে প্রত্যাখান করেছে। রক্তাক্ত গণঅভ্যুথানের মধ্যদিয়ে দেশ থেকে আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করেছে। আওয়ামী লীগ ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে বিতারিত হয়েছে। তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে।’’

“প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা ১০ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি জানিয়েছিলাম। স্পষ্টভাবে বলেছি, রাজনেতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আদালতে বিচারের মধ্যদিয়ে তাদের রাজনীতির ভাগ্য নিধারিত হবে। সরকার আইন পরিবর্তন করে সেটা করল, কিন্তু অনেক পানি ঘোলা করে। আমাদের সরকার ঘোলা করে পানি খায়, একটি প্রাণীর মত। আমি এর বেশি কিছু বলব না।”

দেশে যাতে আর কোনোদিন ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরশাসক জন্ম নিতে না পারে সেজন্য সব পথ বন্ধ করতে হবে জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “সেজন্য আমরা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বসছি। তাদের বলেছি, কিভাবে সংস্কার হবে। সেজন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান ২০২৩ সালেই রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা জানতাম, একদিন নিষ্ঠুরভাবে ফ্যাসিবদের পতন হবে। যারা দেশের জনগণকে হত্যা করেছে, পঙ্গু করেছে, গুম, অপহরণ করেছে তাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।”

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছের সভাপতিত্বে এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রাসেদুজ্জামান মিল্লাত, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী, এম এ মালিক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার।

সিলেট জেলা ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা নুরুল হকের কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে সভায় সূচনা হয়। এ সময় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (দপ্তরের দায়িত্ব) তারিকুল আলম তেনজিন, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি আহ্বায়ক ফজলুল করিম ময়ুন, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আব্দুর রহিম রিপন, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আব্দুল হক, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম, জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ আরাফুল কবির খোকন।

বাংলাদেশ জার্নাল /এমএইচ


%e0%a6%95%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a6%9c%e0%a6%a8-%e0%a6%89%e0%a6%aa%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%be-%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87-%e0%a6%85%e0%a6%b8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *