শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানজুড়ে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও কমান্ডারসহ অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও তিন শতাধিক মানুষ। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা, বিমানঘাঁটি এবং ইউরেনিয়াম মজুদের প্রধান অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েল সরকার বলছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি প্রতিহতের লক্ষ্যেই এই অভিযান। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে আরও গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়েই এই হামলার নির্দেশ দেন। তার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের ভাষ্যমতে, হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ব্যাহত করা এবং ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির সম্ভাবনা দীর্ঘায়িত করা। তবে হামলার ব্যাপকতা এবং ইসরায়েলি রাজনীতিকদের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের কৌশলগত লক্ষ্য হচ্ছে—ইরানের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করা।
শুক্রবার ইসরায়েলের হামলা শুধু পরমাণু স্থাপনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তেহরানে অভিযান চালিয়ে তারা ইরানি সেনাবাহিনীর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীকেও হত্যা করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ ইরান ও তার আঞ্চলিক মিত্রদের কাছে দেশটির বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস করতে পারে, যা ইরানি নেতৃত্বের জন্য অস্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মাইকেল সিং বলেন, ইসরায়েলের পদক্ষেপ ইরানে রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যেই নেয়া হয়েছে।
হামলার পরপরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। তাতে তিনি ইরানের জনগণকে শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আমাদের পদক্ষেপে লেবাননে সরকার বদলেছে, সিরিয়ায় আসাদ শাসনের পতন ঘটেছে। এখন ইরানের জনগণেরও সুযোগ এসেছে। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের বিজয়ের দিন সন্নিকটে।”
বিবিসি জানায়, তেহরানে শুক্রবার রাতজুড়ে একাধিক বিস্ফোরণ হয়। বহুদিন ধরেই ইরানের জনগণ অর্থনৈতিক মন্দা, বাকস্বাধীনতার অভাব, নারী অধিকার ও সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে। এরকম পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের হামলা ইরানি নেতৃত্বের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ‘নীতি পুলিশের’ হাতে মাশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে ব্যাপক সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল। যদিও সে সময় কড়া দমননীতির মাধ্যমে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছিল সরকার।
বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ
%e0%a6%87%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%a6%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a6%a8
Leave a Reply