অবশেষে বিরাট কোহলির হাতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা। অবশেষে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর শোকেসে উঠছে আইপিএলের ট্রফি। অবশেষে সেই সোনালী ট্রফিতে লিখা হলো বেঙ্গালুরুর নাম।
১৭ বছর পেরিয়ে ১৮ বসন্তে এসে আইপিএলের শিরোপা জিতল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ৬ রানে হারাল প্রীতি জিনতার দল পাঞ্জাব কিংসকে। তাদেরও জেতা হয়নি আইপিএল শিরোপা। প্রীতির আক্ষেপের রাতে আহমেদাবাদে উৎসব করলো বেঙ্গালুরু।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ২৯ রান লাগত পাঞ্জাবের। জয়ের সমীকরণ তখনও ছিল পাঞ্জাবের। পেসার জস হ্যাজেলউডের প্রথম বলে শশাঙ্ক সিং কোনো রান নিতে পারলেন না। সীমানায় দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করা বিরাট চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। পরের বল আবারো ডট। এবার অন্তত জয় নিশ্চিত বলাই যায়। বিরাট আবেগে ভাসলেন। চোখ দিয়ে পানি ঝরছেই।
সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে বেঙ্গালুরুর এক সময়ের নিয়মিত ক্রিকেটার এবি ডিভিলিয়ার্স। আবেগে ভাসলেন ডি ভিলিয়ার্স। গ্যালারিতে ছিলেন ক্রিস গেইল। উল্লাসে মাতলেন ক্যারিবীয়ান কিংবদন্তিও।
এরপর শশাঙ্কের চার বলের তাণ্ডব। তিন ছক্কা, এক চার। ২২ রান যোগ হলো। তারপরও ৬ রানের ঘাটতি। শেষ বল ডিপ কভার দিয়ে ছক্কা হলো। কিন্তু ওই ছক্কায় নজর নেই কারো। সব চোখ, সব ক্যামেরা যেন একটি চেহারাই খুঁজে বেরাচ্ছিল। বিরাট কোহলি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, ঘরোয়া ক্রিকেটে সব অর্জনে তার নাম লিখা। কেবল লিখা ছিল না একটি আইপিএলের শিরোপা। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে সেই স্বাদটাও পেয়ে গেলেন।
জয় চূড়ান্ত হতেই মাটিতে বসে পড়লেন। চোখ দিয়ে পানি ঝরছেই। সতীর্থরা এসে তাকে তুলে নিললেন। এরপর বুনো উল্লাসে বুঝিয়ে দিলেন এই শিরোপা কতটা বিশেষ, কতটা অরাধ্য। ২০০৮ সালে বেঙ্গালুরুতেই আইপিএল অভিষেক হয়েছিল তার। ১৭ বছর পর বিরাটের হাতে প্রথম শিরোপা। প্রথম শিরোপা বেঙ্গালুরুরও। লম্বা এই সময়ে বিরাট ও বেঙ্গালুরুর পথ আলাদা হয়নি। অনেক উত্থান পতন হলেও পথ ভোলেনি কেউ। দুয়ের মিলিত শক্তিতেই এবার দেখা মিলল প্রথম শিরোপা।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বেঙ্গালুরু ৯ উইকেটে ১৯০ রান করে। এর আগে তিনবার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জেতা হয়নি বিরাটের। এবার পারলেন। বোলাররা পাঞ্জাবকে আটকে দিলেন ১৮৪ রানে। ৬ রানের জয়ে অধরা শিরোপা নিশ্চিত হলো আরসিবির।
ফাইনালের মঞ্চে বেঙ্গালুরুর হয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউ। ছিল না কোনো ফিফটি। হয়নি পঞ্চাশ রানের কোনো জুটিও। টপ ও মিডল অর্ডারে প্রত্যেকেই ভালো শুরু পেয়েছিলেন। কিন্তু দলের দাবি মেটাতে পারেনি কেউ। তাতে বড় পুঁজির সম্ভাবনা জাগিয়ে পায়নি বেঙ্গালুরু।
ওপেনার ফিল সল্ট ২ চার ও ১ ছক্কায় ৯ বলে ১৬ রান করে থেমে যান। মায়াঙ্ক আগারওয়াল ১৮ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৪ রান করেন। আরেক ওপেনার বিরাট কোহলি শুরুতে সময় নিয়েছিলেন। এরপর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তারপরও ৪৩ রানের বেশি করতে পারেননি। দলের হয়ে তার রানই ছিল সর্বোচ্চ। ৩৫ বলে মাত্র ৩টি চার মারেন বিরাট।
এছাড়া রাজাত পাতিদার ১৬ বলে ২৬, লিয়াম লিভিংস্টোন ১৫ বলে ২৫ এবং জিতেশ শর্মা ১০ বলে ২৪ রান করেন। শেষ দিকে রোমারিও শেফার্ডের ৯ বলে ১৭ রানে বেঙ্গালুরু ১৯০ রানের পুঁজি পায়।
তাতে কী বোলাররা তো ছিলেনই! নাকি? জয়ের জন্য ১৯০ রানের পুঁজিই যথেষ্ট ছিল।
জবাব দিতে নেমে পাঞ্জাব শুরুতে ভয় ধরিয়েছিল। ৫ ওভারে ৪৩ রান, ৮.৩ ওভারে ৭২ রান তুলে নিয়েছিল। ২ উইকেট হারালেও তাদের ব্যাটিং ছিল যুৎসই। কিন্তু ২৬ রানে ৩ উইকেট তুলে বেঙ্গালুরু দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে। মাঝের ওভারগুলোর ওই ধাক্কা পাঞ্জাব সামলে নিতে পারেনি। বিশেষ করে শ্রেয়াস আইয়ার ১ রানে ফিরলে হতাশা ফুটে উঠে তাদের ড্রেসিংরুমে।
ভরসা হয়ে ছিলেন কেবল শশাঙ্ক সিং। ৩০ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কা হাঁকিয়ে আশা জাগিয়ে রেখেছিলেন একপ্রান্তে। কিন্তু শেষ বাজিটা জিততে পারেননি ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৬ রানের আক্ষেপে পুড়ে চোখে জল নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকেও।
বোলিংয়ে ভুবনেশ্বর ও ক্রনাল ২টি করে উইকেট পেয়েছেন। ক্রুনাল ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রানে ২ উইকেট নেন। বাকিদের বোলিংও ছিল দারুণ। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই মিলিছে স্বস্তির ট্রফির। আনন্দের ট্রফি।
বিরাটের চোখের জল ছিল আনন্দের। শশাঙ্কের কষ্টের। এক মাঠে দুই ভিন্ন আবহ। মিশ্র অনুভূতি। জীবনের মতোই ক্রিকেট। একদিন হাসাবে, একদিন কাঁদাবে। বিরাটের আনন্দাশ্রু আইপিএলের শিরোপার আক্ষেপ ঘুচিয়েছে বলার অপেক্ষা রাখে না।
%e0%a6%85%e0%a6%aa%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%ac%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9f-%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%99
Leave a Reply