টাইটা না বেঁধেই চলে এসেছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আজকের দিনটা তার এবং বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট খেলা সপ্নসারথিদের। বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর মনে হলো আমিনুলের টাইটা পড়া উচিত।
আমিনুল এখন শুধু বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান নন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিও। ২৫ বছর আগে, ২০০০ সালের ২৬ জুন আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ হয় বাংলাদেশ। পায় মর্যাদার টেস্ট স্ট্যাটাস। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিসিবি আজ প্রথম টেস্ট খেলা ক্রিকেটারদের বিশেষ ব্লেজার ও সম্মাননা দেয়। এর আগে রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল অনূর্ধ্ব-১২ সিক্স-এ-সাইড টুর্নামেন্ট, চিত্রাঙ্কন ও ধারাভাষ্য প্রতিযোগিতা, ‘হিট দা স্টাম্প’। বিকেলে হোম অব ক্রিকেটে অনুষ্ঠিত হয়েছে সমাপণী আয়োজন।
যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের সম্ভাবনা ভালো জানিয়ে তিনি বলেছেন, “টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ । হয়তো এই ২৫ বছরে বাংলাদেশের সাফল্যের হার অনেক কম। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে যারা খেলছে তাদের প্রথম ২৫ বছরের যেই সাফল্য সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। আগামীর দিনগুলোতে আমাদের সম্ভাবনা আছে। আশা করবো সামনে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে নতুন কিছু অপেক্ষা করছে ।”

ক্রিকেট উন্নয়নে বিসিবির সঙ্গে মিলে কাজ করার আশ্বাস দেন আসিফ মাহমুদ। সারা দেশে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য পূরণে জাতীয় স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতা থেকে বাছাইকৃত ১০০টি বিদ্যালয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তত্ত্বাবধানে সিনথেটিক ক্রিকেট পিচ স্থাপনের ঘোষণা দেন তিনি।
কেক কেটে এবং সাদা জার্সিতে সাইন করেন ক্রিকেটাররা। এরপর প্রথম টেস্ট নিয়ে নিজেদের স্মৃতিচারণ করেন কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা।
শুরুতে এসেছিলেন টেস্টে বাংলদেশের হয়ে প্রথম বল খেলা শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, “বাংলাদেশের হয়ে প্রথম টেস্ট বল খেলা অবশ্যই আমার জন্যে মেমোরেবল। আমাদের ইতিহাসের একটি পার্ট। অনেক বছর পর পুরা দলটা একসাথে হলো। সেই পুরোনো দিনের কথাগুলো মনে পড়ছে।”
মেহরাব হোসেন অপি বলেছেন,” আমাদের নিয়ম ছিলো প্রাকটিস কিট পড়ে থাকতে হবে । কিন্তু আমার জার্সি একটা বল বয়কে দিয়ে দিয়েছিলাম। এই জন্যে ৫০০ টাকা জরিমানা করার কথা। পরে আমাদের কোচ সারোয়ার ইমরান স্যারের ডাবল এক্সেল জার্সি এল বানিয়ে আমি পড়ে ফেলি।”
প্রথম ফিফটি করা হাবিবুল বাশার সুমন বলেছেন, “আমরা আসলে দেখেছিলাম পুরো বাংলাদেশ কিভাবে একটা ম্যাচকে ঘিরে আনন্দে মেতে উঠেছিল। এটা খুব আনন্দ দিয়েছিল।”
রাজিন সালেহ বলেন, “আমি প্রথম টেস্ট খেলতে পারিনি কিন্তু পরিবর্তিত ফিল্ডার হিসেবে নেমে তিনটি ক্যাচ নিয়েছিলাম। যা আমাকে এখনও গর্বিত করে।”
আমিনুল ইসলাম এই আয়োজন এবং বিসিবির ভাবনা নিয়ে বলেছেন, “পোর্টসমাউথ ক্লাবে ক্রিকেট খেলি তখন। একটি টিভি চ্যানেল লর্ডসে লাইভ অনুষ্ঠান করছিল যে, বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেতে পারে। ওই অনুষ্ঠানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। তখন বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিল। সেদিন উপস্থিত থাকতে পেরে সবসময় গর্ববোধ করি।”
“আমরা পঞ্চাশ বছর পূর্তির যে আয়োজন করব, সেটা হয়তো এতো ছোট পরিসরে করব না। বেঁচে থাকব কিনা জানি না, তবে আমাদের হয়তো (উদযাপন অনুষ্ঠানে) একটা স্টেডিয়াম ভাড়া করতে হবে। তখন হয়তো ১০০ টেস্ট জয় দেখতে পারব। আমরা অনেক স্বপ্ন দেখছি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করি।” – যোগ করেন তিনি ।
সবশেষে সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে উন্মোচন করা হয় দেশের ক্রিকেটের প্রথম অনার্স বোর্ড। যেখানে লিখা আছে এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলা ১০৭ ক্রিকেটারের নাম।
Leave a Reply