বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট, আসছে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি

দেশজুড়ে শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে শিক্ষা খাত। বর্তমানে ৩৩ হাজারের বেশি বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক এন্ট্রি লেভেলের সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। অথচ দেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে এসব প্রতিষ্ঠানে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

এই বাস্তবতায় বড় পরিসরে শিক্ষক নিয়োগে উদ্যোগ নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ২২ জুন থেকে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির আওতায় প্রায় ৯০ হাজারের বেশি শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের আবেদন গ্রহণ শুরু করবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এনটিআরসিএ জানিয়েছে, টেকনিক্যাল কোনো জটিলতা না থাকলে আজ সোমবার (১৬ জুন) গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

তবে এবারের গণবিজ্ঞপ্তিতে নিবন্ধনধারীদের একটি বড় অংশ আবেদন থেকে বাদ পড়ছেন। কারণ, ৩৫ বছরের বেশি বয়সী এবং যাদের নিবন্ধন সনদ তিন বছরের পুরোনো, তারা আবেদন করতে পারবেন না। এতে প্রায় দেড় লাখ নিবন্ধনধারী প্রার্থী এবারের নিয়োগের বাইরে থাকবেন।

এনটিআরসিএ সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হক বলেন, ‘‘নীতিমালা অনুযায়ী বয়সসীমা বাধ্যতামূলক। আমরা এমপিও নীতিমালার বাইরে যেতে পারি না।’’

এনটিআরসিএর ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিকে দেশের ইতিহাসে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্যতম বৃহৎ শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। এবারের নিয়োগ কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যেখানে প্রার্থীর যোগ্যতা ও প্রতিষ্ঠানের চাহিদার ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুপারিশ তৈরি করা হবে।

এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে ‘যোগ্য ও দক্ষ’ শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতা ও কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে কাঙ্ক্ষিত হারে শিক্ষক সরবরাহ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, ফেনীর ছাগলনাইয়ার পূর্ব দেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৬টি পদের মধ্যে ৬টি শূন্য রয়েছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বুড়িশ্চর জিয়াউল উলুম কামিল মাদ্রাসায় সাতটি শূন্য পদ, যার মধ্যে ছয়টি ২০২০ সাল থেকে খালি।

গত বছরের ৩১ মার্চ প্রকাশিত ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে ৯৬ হাজার ৭৩৬টি শূন্য পদে আবেদন আহ্বান করা হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ১৯ হাজার ৫৮৬ জনকে নিয়োগে সম্মতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অবশিষ্ট ৭৭ হাজার ৫০০টি পদ শূন্যই থেকে যায়। এর মধ্যে চলতি বছর অবসরের কারণে নতুন করে আরও ২০-২৫ হাজার পদ খালি হয়েছে।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসে ২০১৫ সালে। সেসময় থেকে এনটিআরসিএ শিক্ষক সুপারিশের একচ্ছত্র কর্তৃপক্ষ। এখন নিবন্ধন সনদধারীরা ১ হাজার টাকা ফি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন এবং নিজ বিষয়ের জন্য ৪০টি প্রতিষ্ঠান পছন্দক্রমে নির্বাচন করতে পারেন।

এনটিআরসিএর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, ‘গত ৪ জুন বোর্ড সভায় ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৬ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত তখনই নেওয়া হয়েছিল।’

বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের নেতারা মনে করেন, দীর্ঘ সময় ধরে সুপারিশ কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ায় শিক্ষক পদের অপূর্ণতা থেকেই যাচ্ছে। তারা এনটিআরসিএকে কমিশনে রূপান্তরের সুপারিশ করেছেন।

এদিকে বিভিন্ন পলিটেকনিক, মনোটেকনিক এবং কারিগরি স্কুল-কলেজেও শোচনীয় অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারি হিসাবেই এসব প্রতিষ্ঠানে গড়ে ৭০ শতাংশ শিক্ষক পদ খালি রয়েছে। জনশক্তি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোর অধীন কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও শিক্ষক সংকট ৬০ শতাংশের বেশি। সূত্র: ইত্তেফাক


বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ


%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *