জনশক্তি নিতে মালয়েশিয়ার ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে’ বাংলাদেশ: আসিফ নজরুল

আগামী কয়েক মাসে মালয়েশিয়া এক থেকে দেড় লাখ বিদেশি জনশক্তি নেওয়ার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আশ্বাস মিলেছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার পুত্রাজায়ায় দেশটির তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকালে নিজের ফেইসবুক পেইজে এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, “পরশুদিন (মঙ্গলবার) আমি এখানে এসেছিলাম। আজ এখানে দেশটির তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। লোক নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কেওয়ং। ”বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি লোক নেওয়া হবে। এটুকু আশ্বাস আমরা পেয়েছি।”

২০২৪ সাল থেকে মালয়েশিয়ার জনশক্তির বাজার বন্ধ বাংলাদেশের। ওই বছর দেশটির সরকার ঘোষণা করেছিল, আগে থেকে অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের ৩১ মে এর মধ্যে দেশটিতে যেতে হবে। এরপর কর্মী ভিসায় আর কেউ সেখানে ঢুকতে পারবেন না। ওই তারিখের পর থেকে আর কোনো জনশক্তি যেতে পারেনি দেশটিতে।

সেসময় ভিসা থাকলেও টিকেট সংক্রান্ত জটিলতায় বাংলাদেশ থেকে যেতে পারেননি প্রায় ১৭ হাজার কর্মী। তাদের কাজে নিতে সেই থেকে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
এমন প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনা করতে গত মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার তিনি দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন বিন ইসমাইল ও মানবসম্পদমন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কেওয়ং এর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ব্ঠৈক করেন। এছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন।

তাদের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য সমান সুযোগ দিতে অনুরোধ করার কথা ভিডিও বার্তায় তুলে ধরেন উপদেষ্টা। সবাই লোক পাঠানোর সুযোগ পায় সেজন্য এ অনুরোধ করেন তিনি।


তিনি বলেন, ”আমরা অনেক ভালোভাবে বুঝিয়ে বলেছি, উনারা বলেছেন, উনারা এটা ভালোভাবে বিবেচনা করে দেখবেন। আমাদের অচিরেই এই ব্যাপারে উনারা সিদ্ধান্ত জানাবেন।” মালয়েশিয়ায় মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা নিয়ে বড় অগ্রগতি হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “একটা বড় অগ্রগতি হয়েছে। আমি উনাদের বলেছিলাম, আমাদের শ্রমিকেরা সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা পান। অন্যদেশের শ্রমিকরা পান মাল্টিপল এন্ট্রি। ওটা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছে। উনি আমাদের শুধু আশ্বাস দেন নাই; উনার সাথে যারা ছিলেন, তাদের এই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত বন্ধু। গত বছর বাংলাদেশ সফরের সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ থেকে যেতে না পারা কর্মীদের দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ করে দেবেন। এটা নিয়ে পরে আরও আলোচনা হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। ব্যাচ করে এসব কর্মী নেবে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়া।

“প্রথম দফায় ৭ হাজার ৯২৬ জন কর্মীকে নেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন তারা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের মালয়েশিয়ায় কাজের সুযোগ দেওয়া হবে।”

আসিফ নজরুল বলেন, “বাংলাদেশি যেসব শ্রমিক অবৈধ হয়ে গেছেন, তাদের বৈধ করে দিতে বৈঠকে অনুরোধ করেছি। এর জবাবে তারা বলেছেন, এটা মাঝেমধ্যে করা হয়; সর্বশেষ গত বছর করা হয়েছিল। তবে যাদের ভিসার মেয়াদ নেই, তাদের ক্ষেত্রে এটা করা যায় না। তাদেরও বিবেচনায় নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। ”অনেক সময় নিয়োগকর্তার কারণে শ্রমিকেরা ভিসা নবায়ন করতে পারেন না। তারা এটা বিবেচনা করে দেখবেন।”

ভিডিও বার্তায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, “বৈঠকে মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তাকর্মী, নার্স, কেয়ারগিভারসহ দক্ষ কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।” আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীও অংশ নেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএইচ


%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a6%b6%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *