‘কিশোর গ্যাং’ মহড়া, মানুষের উদ্বেগ

ঢাকার বাইরে হঠাৎ করে বেপরোয়া হয়ে ফিরেছে ‘কিশোর গ্যাং’। গতকাল শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে কুমিল্লা নগরে দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দেয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এতে নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রতিটি বিভাগ-জেলা ও পাড়া-মহল্লায়।

দল বেঁধে চলাচল, আধিপত্য বিস্তারসহ নিজেদের হিরোইজম জাহির করতে বিভিন্ন চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক কারবার এমনকি খুনোখুনিতে লিপ্ত হচ্ছে কিশোর-তরুণরা। তবে অভিযোগ রয়েছে, কিশোর গ্যাংয়ের পেছনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী, স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি। কিছু জায়গায় তাদের ইন্ধন দিচ্ছে রাজনৈতিক নেতারাসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীরা।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সারা দেশের পাড়া-মহল্লাকেন্দ্রিক কিশোর গ্যাং কালচার আরও বেড়েছে। এতে সমাজে বসবাসকারী নাগরিকদের আতঙ্কও বাড়ছে।

গতকাল বেলা তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রানীর দিঘির পাড়, তালপুকুরপাড় ও আদালতপাড়া এলাকায় তিনটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মহড়া দেয়। জানা গেছে, নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তারা এভাবে মহড়া দিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের দিকে কুমিল্লা নগরে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। নগরে ‘রতন’, ‘ঈগল’, ‘র‍্যাক্স’, ‘এক্স’, ‘এলআরএন’, ‘সিবিক’, ‘মডার্ন’, ‘রকস্টার’, ‘ডিস্কো বয়েজ’, ‘বস’সহ কমপক্ষে ২০টি কিশোর গ্যাং আছে। এসব গ্যাং নিজেদের আধিপত্য দেখাতে প্রকাশ্যে সহিংসতায় জড়াচ্ছে। ২০১৭ সালের পর কিশোর গ্যাংয়ের হাতে ৮ বছরে অন্তত ১২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া মাদক কারবার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে এসব গ্যাং।

কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সময়ে ধারাবাহিকভাবে অভিযানের কারণে কিশোর গ্যাং প্রায় নিষ্ক্রিয় ছিল। তবে নতুন করে তারা মাথাচাড়া দিতে চাইছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

এদিকে চাঁদপুরের সদর, কচুয়া ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ৪ জন মাদক কারবারি ও ৭ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুর সদর আর্মি ক্যাম্পের অপারেশনাল অফিসার লেফটেন্যান্ট জাবিদ হাসান। তিনি জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

কিশোর গ্যাং নামের অপরাধীচক্র এ দেশে গড়ে ওঠে প্রায় এক দশক আগে। ঢাকা শহর থেকে শুরু করে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এদের তৎপরতা। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব অপরাধীচক্রের সদস্যদের অধিকাংশ ১৮ বছরের কম বয়সী, এ কারণেই এরা কিশোর গ্যাং উপাধি পেয়েছে। তবে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সদস্যও প্রতিটি দলে কমবেশি থাকে। বয়সীদের হাতেই নেতৃত্ব থাকে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আইনের শাসনে ঘাটতি থাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে সমাজে। কিশোর অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবস্থাগুলোতে কিছুটা ঘাটতিও আছে, এ ঘাটতি সমাজব্যবস্থায়ও রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের কিশোর অপরাধীদের শাস্তির চেয়ে সংশোধনের বিষয়ে গুরুত্ব বেশি দিতে হবে। পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা গেলে এ অপরাধ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএইচ


%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8b%e0%a6%b0-%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%82-%e0%a6%ae%e0%a6%b9%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%be-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%81

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *