অঘোষিত যুদ্ধের মুখে দেশের ব্যবসায়ীরা, হয়রানি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের অভিযোগ

দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বর্তমানে এক ধরনের অঘোষিত যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছেন। নানা ধরনের হয়রানি ও চাপের মুখে পড়ছেন তারা। বড় ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হচ্ছে, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তলব করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের বাসা ও অফিসে হামলা চালানো হচ্ছে সংঘবদ্ধ মবের মাধ্যমে। হামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করার ঘটনাও ঘটছে।

শেয়ারবাজারে ব্যক্তি ও কোম্পানির শেয়ারের বিরুদ্ধে মামলা করে শেয়ারের দাম কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যার সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। এমনকি কোনো কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যা মামলার অভিযোগও আনা হচ্ছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করে বলছেন, যদি দ্রুত এই পরিস্থিতির পরিবর্তন না হয়, তাহলে দেশের সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য ভয়াবহ সংকটে পড়বে। ইতোমধ্যেই অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, বেকারত্ব বেড়েছে, এবং নতুন শিল্প স্থাপন অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

জুলাইয়ের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এমনিতেই দেশের অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় ছিল। এর সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্য বন্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ে বাড়তি শুল্ক আরোপসহ নানা বৈশ্বিক চাপ যুক্ত হয়ে শিল্প খাত আরও চাপে পড়েছে। অথচ এই সময় দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তার বদলে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশীয় শিল্পকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বিগত সরকারের আমলে যারা ট্রেডিংয়ের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং যারা দেশে বিনিয়োগ করেছেন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন, তাদেরই এখন নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

গত বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর এক আলোচনা সভায় ব্যবসায়ীরা এ অবস্থায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, আগস্টের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই ও পণ্য লুটপাট বেড়েছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সব ধরনের ব্যবসায়ী।

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, ব্যবসায়িক পরিবেশের বর্তমান সংকট শুধু বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করছে না, বরং অনেক উদ্যোক্তাকে আস্থাহীনতায় ফেলছে। শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, এবং সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই নিম্নমুখী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ ৩০ হাজার। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরে বেকারত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৬৩ শতাংশে। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) কমেছে ২৬ শতাংশ। পাশাপাশি দেশি বিনিয়োগেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, ব্যাংক ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ফেব্রুয়ারিতে নেমে এসেছে ৬.৮২ শতাংশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং বিআইডিএস-এর সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরি বলেন, এ অবস্থাকে কোনোভাবেই ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ বলা যায় না। মিথ্যা মামলা, চাঁদাবাজি, হামলা ও হয়রানির ফলে শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক অস্থিরতাও বাড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগ ও শিল্প স্থাপন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ও সমাজে এক মহা সংকট ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ


%e0%a6%85%e0%a6%98%e0%a7%8b%e0%a6%b7%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%96%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *